চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ সোমবার
বাংলাদেশের আকাশে আজ শনিবার হিজরি শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আগামীকাল রোববার রমজানের ৩০তম দিন অর্থাৎ রোজা পূরণ হবে। আগামী সোমবার সারা দেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।
শনিবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা শেষে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, ‘সব জেলা প্রশাসন ও আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৬৪ জেলার কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। আগামীকাল ২৪ মে ৩০তম রোজা হবে। তাই ঈদ হবে সোমবার।’
এর আগে সচিব নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা মাসউদ ও অন্য সদস্য আলেম-ওলামারা উপস্থিত ছিলেন।
রজমানের দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম-সাধনার পর হাজির হয় ঈদুল ফিতর। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এ বছর উৎসব আর আনন্দের ঈদ আসছে ভিন্ন চেহারা নিয়ে। ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় জামায়াত না করে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনায় এবার খোলা মাঠে হচ্ছে না ঈদের নামাজের জামাত। ঈদ জামাত হবে মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও।
তবে ইসলামিক ফাউেন্ডশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বাযয়য়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন মুয়াজ্জিন হাফেজ কারি কাজী মাসুদুর রহমান।
দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। এ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী।
তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম হাফেয মাওলানা এহসানুল হক।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ জামাত। এ জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতের ইমামিত করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান।
এই পাঁচটি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
এদিকে মসজিদের ওযুখানা ব্যবহার না করে প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে ওযু করে মসজিদে আসাসহ ১৪টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এবার খোলা স্থানের পরিবর্তে কাছের মসজিদে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাসায় যাতায়াত না করার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রে ঘোরাঘুরি না করে নিজ ঘরে ঈদ উদযাপন করতেও বলা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১৪টি নির্দেশনায় ডিএমপি জানায়, মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে এবার ঈদগাহ বা উন্মুক্ত স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে কাছের মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাতের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ঈদ উপলক্ষে ডিএমপির নির্দেশনাগুলো হলো- ঈদের নামাজের জামাতের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে প্রবেশদ্বারে সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
মসজিদের ওজুখানা ব্যবহার না করে প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
ঈদের নামাজের জামায়াতে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতারবদ্ধ হতে হবে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো থেকে বিরত থাকুন, মসজিদে শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক ব্যবস্থা রাখার জন্য মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করা হলো।
করোনা পরিস্থিতিতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাসায় যাতায়াত করা থেকে বিরত থাকুন, ঈদের দিন ও পরবর্তী সময়ে বিনোদন কেন্দ্রে যাতায়াত না করে নিজ ঘরে অবস্থান করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করুন।
ঈদ উদযাপনের জন্য যারা ঢাকার বাইরে যাবেন তারা তাদের বাসা অথবা ফ্ল্যাটের মেইন গেটে অটোলক ব্যবহার করুন এবং বাসাবাড়ি ত্যাগের আগে রুমের দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালাবদ্ধ করুন, মালিক পক্ষ নিজ নিজ মার্কেট ও শপিংমলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করুন এবং আপনার এলাকার থানা ও ফাঁড়ির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন।
খালি বাসায় মূল্যবান সামগ্রী না রেখে ঢাকায় অবস্থান করছেন এমন আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় তা রেখে যান।