ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের সাড়ে চার হাজার গাছ উপড়ে গেছে
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আটকে দিয়েছিল সুন্দরবন। যে শক্তিতে ‘বুলবুল’ সুন্দরবনে আঘাত হানে, লোকালয়ে প্রবেশের সময় ওই শক্তি আর ছিল না। ফলে লোকালয়ের ক্ষতি তুলনামূলক অনেক কম হয়েছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছে বনবিভাগ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুলনা থেকে ওই প্রতিবেদন বনবিভাগের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে কোনো বণ্যপ্রাণির ক্ষতির তথ্য জানা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোট ৬৩টি স্টেশন ও ফাঁড়ির সাহায্যে করা ওই জরিপে দেখা গেছে, ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে সুন্দরবনে চার হাজার ৫৮৯টি গাছ উপড়ে পড়েছে। বনবিভাগের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৬২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগে।
ঝড়ের পর খুলনা আবহাওয়া দপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেছিলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ প্রথম আঘাত হানে ভারতে। সেখান থেকে সাতক্ষীরার সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সুন্দরবনে আঘাতের সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। তবে সুন্দরবন অতিক্রম করে লোকালয়ে প্রবেশের সময় ঝড়ের গতি কমে যায়। তখন ঝড়ের গতি ছিল ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। ধারণা করা হচ্ছে, সুন্দরবনের কারণে ঝড়ের গতি কমে গেছে। আর এ কারণে লোকালয়ে মানুষের ক্ষতির পরিমাণ কম।
বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনকে পূর্ব ও পশ্চিম এই দুটি বিভাগে ভাগ করা হয়। সাতক্ষীরা ও খুলনার অংশ পশ্চিম বনবিভাগের আওতায়। আর বাগেরহাট ও বরিশাল অংশ পূর্ব বনবিভাগের মধ্যে।
সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওই বিভাগে গাছ উপড়ে পড়েছে চার হাজার দুটি। আড়পাঙ্গাশিয়া ও শিবসা নদীর দুই তীরের গাছ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বনবিভাগ থেকে আর্থিকভাবে ওই গাছের ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ওই বনবিভাগের বিভিন্ন ফরেস্ট অফিসের ক্ষতির পরিমাণ ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশির আল মামুন বলেন, ক্ষতির ধরন দেখে মনে হয়েছে ঝড় ওই দুই নদীর তীরে বেশি আছড়ে পড়েছে। তবে ঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস না থাকায় কোনো বন্যপ্রাণির ক্ষতি হয়নি বলে তাঁরা মনে করছেন।
ঝড়ে পূর্ব বনবিভাগে গাছ উপড়ে পড়েছে ৫৮৭টি। ওই গাছের আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে আট লাখ ৬২ হাজার টাকা। অন্যদিকে বনবিভাগের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
ওই বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঝড়ের বেশি ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম বিভাগে। যে গাছ পড়ে গেছে তার বেশিরভাগই স্টেশন ও ফাঁড়ির। তবে কিছু জেটি ও ওয়াচ টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্টেশন ও ফাঁড়ির অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে।’
বনবিভাগের খুলনা সার্কেলের প্রধান বন কর্মকর্তা মো. মঈনুদ্দিন খান বলেন, ঝড়ের পর বনবিভাগে কর্মরত স্টেশন ও ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ ওই ক্ষতির তথ্য নিয়ে যাচাই করে সার্কেল অফিসে জমা দেয়। পরে ওই প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।