গল্প-কবিতার বই দিয়ে খেলার মাঠ থেকে কিশোরদের ঘরে পাঠাচ্ছে পুলিশ
গাজীপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নানা কৌশলে কাজ করছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। গতকাল বুধবার বিকেলে শ্রীপুর উপজেলার শিশু-কিশোরদের হাতে দেশের খ্যাতনামা লেখকদের গল্প ও কবিতার বই দিয়ে ক্রিকেট খেলার মাঠ থেকে ঘরে পাঠিয়েছেন জেলার সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন বাইরে না গিয়ে ঘরে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে পড়েছে শিশু-কিশোররা। ধৈর্য হারিয়ে তারা মাঝেমধ্যেই লুকিয়ে বাড়ির পাশের মাঠে খেলাধুলার জন্য জড়ো হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণে ভয়ে ভীত অভিভাবকদের তাড়া খেয়ে মনের অপূর্ণ সাধ নিয়ে তারা বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
গতকাল বুধবার বিকেলে শ্রীপুর উপজেলার সলিংমোড় এলাকায় মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কের পাশে একটি মাঠে দল বেঁধে ক্রিকেট খেলছিল স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৪/২৫ শিশু-কিশোর। তাদের মনে ছিল না করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক। এ সময় মাঠের পাশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন গাজীপুর জেলা পুলিশের সহকারী সুপার আল মামুন। তাঁর নজরে পড়ে শিশু-কিশোর খেলোয়াড়দের। তিনি গাড়িটি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলারত শিশু-কিশোরদের ডেকে জড়ো করে করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে ঘরে থাকাসহ কয়েকটি সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পরামর্শ দেন। এ সময় শিশু-কিশোরদের চোখে মুখে বিষণ্ণতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাদের বিষণ্ণ মনে মাঠ থেকে ঘরে যেতে দেখে পুলিশের ওই কর্মকর্তার চোখেও পানি এসে যায়। এ সময় তিনি শিশু-কিশোরদের কাছে ডেকে নেন এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেন দেশের খ্যাতনামা লেখকদের গল্প-কবিতার বই। বই হতে পেয়ে মুহূর্তে শিশু-কিশোররা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে এবং হাতে তালি দিতে থাকে।
পরে তারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সরকারি নির্দেশ মেনে ঘরে থাকার শপথ করে বই হাতে নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যায়। শিশুদের আনন্দ ও উচ্ছ্বলতা দেখে পুলিশের ওই কর্মকর্তাও আনন্দিত হয়ে ওঠেন এবং ওই এলাকা ত্যাগ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তার হাত থেকে গল্প-কবিতার বই পেয়ে দারুণ খুশি শিশু-কিশোররা। তারা জানায়, আগে পুলিশ দেখে ভয় পেতাম, ভাবতাম, তারা মানুষকে পেটায় ও বদমেজাজি হয়। কিন্তু পুলিশ যে এত ভালো হতে পারে, তা আজ দেখল। একজন পুলিশ কর্মকর্তার হাত থেকে বই নিয়েছে। এতে তাদের ভুল ধারণা ও ভয় কেটে গেছে। তারা এখন বাসায় গিয়ে পুলিশের দেওয়া বই পড়ে সময় কাটাবে। বাসা থেকে বের হবে না।
সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন এ ব্যাপারে বলেন, মরণঘাতী করোনাভাইরাস আতঙ্কে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিশু-কিশোর বয়সের এসব শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে সময় কাটাতে গিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। উচ্ছল এসব শিশু-কিশোর সুযোগ পেলেই ঘর থেকে লুকিয়ে খেলার মাঠে চলে যায়। তাই এলাকার প্রতিটি খেলার মাঠে গিয়ে শিশু-কিশোরদের বুঝিয়ে এবং হাতে গল্প ও কবিতার বই দিয়ে কিছুদিনের জন্য ঘরে রাখার চেষ্টা করছি। আশা করছি, এতে তাদের বই পড়ার আগ্রহ বাড়বে এবং বই পড়ার মধ্য দিয়ে অলস সময় কাটবে। সেইসঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে তারা ও তাদের পরিবার রক্ষা পাবে।