কিশোরগঞ্জে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা
কিশোরগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছুঁই ছুঁই। এ ছাড়া জেলায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। এ রকম সংকটজনক পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে এডিস মশার প্রকোপ। এর ফলে গত বছরের মতো এবারও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনা সংকট চলমান থাকা অবস্থাতেই ডেঙ্গুর আশঙ্কা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে জেলার বাসিন্দাদের।
ডেঙ্গুর আশঙ্কার মধ্যেই তা নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে এসেছে জেলা সদরের ‘ডেঙ্গু রোধে কিশোরগঞ্জ’ নামের স্বেচ্ছাশ্রমভিত্তিক সামাজিক সংগঠন। ১২০ জন কিশোর-তরুণের অংশগ্রহণে পরিচালিত হচ্ছে সংগঠনটি। গত বুধবার জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনের নেতারা।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের উদ্যোক্তা লুৎফুল্লাহ হুসাইন পাভেল লিখিত বক্তব্য পাঠকালে জানান, কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে এডিস মশার জন্মস্থল বিনাশ করতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ছয়টি ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানো হবে। সেই সঙ্গে পৌরবাসীর মধ্যে ডেঙ্গু বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে লিফলেট বিতরণ করা হবে। প্রতি ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবী এই কর্মসূচিতে কাজ করবে। মোট ১২০ জন স্বেচ্ছাসেবকদের সবাই ছাত্র। কেউ স্কুলে, কেউ কলেজে এবং কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান এ ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য করে জানান, উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সরকারের কার্যক্রমের পাশাপাশি যুব সমাজ ও সচেতন মহল যদি এভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে আসেন, তাহলে ডেঙ্গুসহ সব সমস্যা সমাধান সহজ হবে।
‘ডেঙ্গু রোধে কিশোরগঞ্জ’ সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. শহীদুল হক লাভলু জানান, গত বছর কিশোরগঞ্জের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল নাজুক। মানুষ যেমন ব্যাপক হারে আক্রান্ত হয়েছে, তেমনি মারাও গেছে। এবার করোনার কারণে সমস্যাটি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই আমরা মানুষকে সচেতন করতে স্বেচ্ছাশ্রমে মাঠে নেমেছি।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গত ১৮ জুন সকালে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে স্বেচ্ছাসেবকরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। বেশিরভাগ সদস্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক, বৃষ্টিতে রেইনকোট ও পায়ে বুট পরে নেমে যান এডিসের আবাসস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রমে। বাকি সদস্যরা বাসায় বাসায় গিয়ে ও পথচারীদের এডিস ও ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারণা চালান এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেন। সচিত্র প্রচারপত্রে ডেঙ্গু কীভাবে হয়, বা হওয়ার কারণ ও লক্ষণ কী, কীভাবে এডিস মশার বিস্তার রোধ করা যায় ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে।
কিশোর-তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের ডেঙ্গুবিরোধী এ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল ইসলাম। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।