করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে পুড়ে মরলেন তাঁরা
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উপসর্গ নিয়ে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন পাঁচজন। তাঁরা সবাই মারা গেছেন। কিন্তু করোনায় তাঁদের মৃত্যু হয়নি, মৃত্যু হয়েছে অগ্নিকাণ্ডে। আগুন লাগার ২০ মিনিটের ভেতরে পাঁচজন পুড়ে মারা যান বলে হাসপাতালের দাবি।
গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল হাসপাতালের প্রধান গেটের বাইরে পাঁচ শয্যা বিশিষ্ট একটি আইসোলেশন ইউনিটে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পাঁচজনই করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে শটসার্কিট থেকে লাগা আগুন বাতাসের তীব্রতায় সঙ্গে সঙ্গেই ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। এই পরিস্থিতিতে ওই পাঁচ রোগীর কেউ-ই আইসোলেশন ইউনিট থেকে বের হতে পারেননি। ফলে আগুনের লেলিহানে দাউদাউ করে পুড়ে মরতে হয় তাঁদের। অথচ, তাঁরা পাঁচজনই ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন করোনা থেকে বেঁচে থাকতে। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন লাইফ সাপোর্টে থেকে।
তবে আইসোলেশনে থাকা ওই পাঁচ রোগীর করোনা পজিটিভ কিনা তা নিয়ে ঘটনার শুরু থেকে ভিন্ন-ভিন্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, করোনা পজিটিভ ছাড়া আইসোলেশনে রাখা হয় না। পুলিশও বলেছিল, মৃত ব্যক্তিরা করোনা রোগী। যদিও পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে তিনজনের করোনা পজিটিভ এবং দুজনের করোনা নেগেটিভ ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘পাঁচজনের মধ্যে তিনজন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বাকি দুজনের করোনা নেগেটিভ। তাঁরা সবাই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।’
মৃত ব্যক্তিরা হলেন রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভেরুন এন্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও মো. মাহাবুব (৫০)। তবে এই পাঁচজনের কোন তিনজনের করোনা পজিটিভ তা জানানো হয়নি।
গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার কামরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস যে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছে তাঁদের শরীরের অংশ পুড়ে গেছে কি না তা তদন্তের বিষয়। তবে তারা শ্বাসকষ্টেও মারা যেতে পারেন। সব মিলিয়ে তদন্ত করে বলা যাবে আসলে কি হয়েছিল।’
ঘটনার পরপরই ইউনাইটেড হাসপাতালের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান শাগুফা আনোয়ার এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতালের বহিরাঙ্গণে আইসোলেশন ইউনিট তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে কেউ মারা যাননি।’
এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানান। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘এই আইসোলেশন ইউনিটে যাদের করোনা পজিটিভ শুধু তাঁদেরই চিকিৎসা হয়। সেই হিসেবে বলতেই পারেন তারা করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন।’
তবে রাত দেড়টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতাল সংলগ্ন তবে মূল ভবনের বাইরের আইসোলেশন ইউনিটে সম্ভবত বৈদ্যুতিক শটসার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন আইসোলেশন ইউনিটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বাতাসের তীব্রতায় আগুন প্রচণ্ড দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে ভর্তি পাঁচজন রোগীকে বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়নি এবং ভেতরে থাকা এই পাঁচজন রোগী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁরা করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘দমকল বাহিনীকে তাৎক্ষণিক খবর দেওয়া হয়। হাসপাতালের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও দমকল বাহিনীর সহায়তায় ১৫-২০ মিনিটে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে দমকল বাহিনী তদন্ত করছে এবং ইউনাইটেড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কে তাদের পূর্ণ সহায়তা প্রদান করছে।’