করোনাভাইরাস : জিডিপির ১০ শতাংশ বিশেষ তহবিল চায় টিআইবি
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমপরিমাণ বিশেষ তহবিল গঠন এবং তা ব্যবহারে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি এই আহ্বান জানায় বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
টিআইবি জানায়, করোনাভা্ইরাসের ঝুঁকি ও এর বহুমুখী প্রভাব মোকাবিলায় এখনই স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাসহ একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন অপরিহার্য। একইসঙ্গে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সব আর্থিক লেনদেনসহ প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলার যে ডাক দিয়েছেন তাতে একাত্মতাও জানায় টিআইবি।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশবাসীকে হোম-কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে নিতান্তই অপ্রতুল ও বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় নেই। এখনই সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা সংবলিত জাতীয় কৌশল চূড়ান্ত করতে হবে এবং একইসঙ্গে তা বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থের জোগানের পাশাপাশি বহুমুখী উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করা ও চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও তাদের অমূল্য অবদানের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে, বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
রপ্তানি সংশ্লিষ্ট খাতের শ্রমিক ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তাকে সাধুবাদ জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কীভাবে এর বাস্তবায়ন হবে, বরাদ্দকৃত অর্থ কোন প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের হাতে যাবে এবং এ ক্ষেত্রে কীভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এখনই নির্ধারণ করতে হবে। এ সহায়তার আওতা দেশের হতদরিদ্রদের জন্য সমভাবে সম্প্রসারিত করতে হবে। একইভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন, স্বল্প বেতনের কর্মজীবী মানুষ, দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাদের অনেকেই এরমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন বা হবেন তাদেরও এর আওতায় আনতে হবে।’
নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সংকট চলাকালীন খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ-লাইন প্রাধান্যের সঙ্গে সচল রাখতে হবে, তা না হলে কোভিড-১৯-এর পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কারণ হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নিয়োজিত পুলিশের একাংশের বিভ্রান্ত ও অশোভন বলপ্রয়োগ সংকট ঘনীভূত করছে, যা বন্ধ করতে হবে।’
সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি দেশের ধনিকশ্রেণিকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় টিআইবি।
বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করা বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতায় আগ্রহী, অংশীদার এবং অনেকে লাভবান, তাদেরও নিজেদের স্বার্থে এ বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার আহ্বান জানায় সংস্থাটি।