এ বছর এডিস মশা আরো বেশি, বলছেন গবেষকরা
২০১৯ সালের চেয়েও এ বছর বেশি পাওয়া যাচ্ছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত বৈজ্ঞানিক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অন্যদিকে, আবহাওয়া অফিস থেকে পরিচালিত আরেক গবেষণায় উঠে এসেছে, আগের বছরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কেমন ছিল, তার ওপর নির্ভর করে নতুন বছরে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের (জাবি) অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের নেতৃত্ব একদল গবেষক ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে মশার নমুনা সংগ্রহ করেন। তারপর ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার নমুনা আলাদা করেন এবং তুলনা করেন গত বছরের শুরুর সময়ের সঙ্গে, যে সময় ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল।
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশা, যে ডেঙ্গুর বাহক, সেই এডিস মশার ডেনসিটি (ঘনত্ব) গত বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির তুলনায় এ বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে বেশি পেয়েছি। এডিস মশার ঘনত্ব ও গত বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে রোগীর হিসাব, এগুলো দিয়ে আমরা যদি প্রেডিকশন মডেল তৈরি করি, তাহলে একটা প্রজেকশন আমরা পাই। যেটা দেখলে বোঝা যায়, এ বছরও ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা আছে, যদি আগাম পদক্ষেপ নেওয়া না হয়।’
ডেঙ্গুর মহামারির বছর ২০১৯-এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছিলেন, তার চেয়ে এ বছর একই সময়ে ভর্তি হয়েছেন প্রায় পাঁচ গুণ বেশি রোগী। আর সে জন্য এ বছর ২০১৯-এর চেয়েও ডেঙ্গুর মহামারি বেশি হবে কি না, এমন প্রশ্নে আবহাওয়া অফিসের গবেষক গত ২০ বছর আবহাওয়া ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সঙ্গে আগের বছরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কেমন ছিল, তার একটি সম্পর্ক রয়েছে। আর সম্পর্ক রয়েছে ওই বছর থেমে থেমে বৃষ্টি বেশি হয় কি না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের গবেষক শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘আগের বছর ডেঙ্গু বেশি হওয়া মানে, মশার লার্ভা বেশি থাকা। সেই লার্ভার পরের বছর আরো বেশি প্রোডাক্টিভিটি হয়। এ বছর যদি একই ওয়েদার (আবহাওয়া) থাকে এবং লোকজন যদি অ্যাওয়ার (সচেতন) হয়, তাহলে ওয়েদার যেমনই হোক ডেঙ্গু হবে না।’
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, আগের বছর ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা যে ব্যাপকভাবে ডিম পেড়ে রেখেছে, অল্প সময়ের বৃষ্টি পেলে সেগুলো প্রাণ ফিরে পাবে, যে অল্প বৃষ্টি গত মঙ্গল ও বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে লক্ষ করা গেছে।
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশার ডিম শুকনো অবস্থায় প্রকৃতিতে ছয় মাস থেকে এক বছর থেকে যেতে পারে। গত বছর সিজনের শেষে যে মশাটি ডিম পেড়েছে, বৃষ্টিপাত হলেই সে ডিমটি ফুটে বাচ্চা হবে। ড্রেন, ডোবা ও রাস্তার আশপাশে স্প্রে করা হচ্ছে, রাস্তার আশপাশে কিন্তু এডিস মশা থাকে না। এডিস মশা থাকে মানুষের বাড়িতে। ড্রেন, ডোবা, নর্দমায় যেসব মশা থাকে, সেগুলো কিউরেক্স মশা। তাই স্পেসিফিকভাবে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগই কিউরেক্সকেন্দ্রিক, এডিসকেন্দ্রিক ব্যবস্থা কম।’
তবে আবহাওয়া অফিসের গবেষণা থেকে জানা যায়, আগের বছর যতই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকুক না কেন, থেমে থেমে বৃষ্টির বদলে যদি ভারি বৃষ্টি এবং অত্যধিক গরম পড়ে, তবে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা খুব বেশি বিস্তার ঘটাতে পারে না।