এমভি ময়ূরের মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা
রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহতের ঘটনায় লঞ্চ চাপা দেওয়া এমভি ময়ূরের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটের নৌ-থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামছুল আলম বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী এসআই মো. শামছুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘লঞ্চডুবির ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর শ্যামবাজার বরাবর ফরাশগঞ্জ ঘাটসংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পাশে সোমবার সকাল ৯টা ১৩ মিনিটে মর্নিংবার্ড লঞ্চকে এমভি ময়ূর-২ লঞ্চটি দ্রুত বেপরোয়াভাবে ধাক্কা মারে। ধাক্কার ফলে মর্নিংবার্ড লঞ্চটি ঘটনাস্থলে দুমড়েমুচড়ে ভাঙে সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীসহ পানিতে ডুবে যায়।
এসআই মো. শামছুল আলম মামলার এজাহারে বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাই। ডুবে যাওয়া মর্নিংবার্ডে ৬০ থেকে ৬৫ জন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ৩২ জনের লাশ উদ্বার করে। আসামিরা লঞ্চটি ডুবিয়ে অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটায়।’
এসআই মো. শামছুল আলম আরো বলেন, আসামিরা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৮০/৩০৪ (ক, ৪৩৭/৩৪) ধারায় অপরাধ করেছে। উপর্যুক্ত অপরাধের বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে সত্য প্রতীয়মান হওয়ায় বর্ণিত ধারায় এজাহার গ্রহণের আবেদন করলাম। তবে আসামিরা শত্রতামূলকভাবে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক এ প্রাণহানি ঘটিয়েছে কি না, তা নিবিড়ভাবে তদন্তের প্রয়োজন।
মামলায় সাত আসামি হলেন, এমভি ময়ূরের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ (৩৩), লঞ্চের দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার কর্মচারি মো. আবুল বাশার মোল্লা (৬৫), লঞ্চের তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. জাকির হোসেন (৫৪), ইঞ্জিন চালক চালক শিপন হালদার (৪৫), চালক শাকিল হোসেন (২৮), কর্মচারি সুকানি নাসির মৃধা (৪০) ও মো. হৃদয় (২৪)।
রাজধানীর শ্যামবাজারসংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে সোমবার সকালে লঞ্চডুবির পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর ডুবুরিরা সম্মিলিতভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ৮০ জন ধারণক্ষমতার ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তারা। লঞ্চডুবির পর যাত্রীদের মধ্যে কজন সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন সেটিও নিশ্চিত না হওয়ায় এখনো ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।
এ ঘটনার তদন্তে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিষয়টি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে একটা বলা যায় যে, পরিকল্পিতভাবে মর্নিং বার্ড লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, বড় লঞ্চটি ছোট লঞ্চকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে দিচ্ছে। এজন্য যারা দায়ী, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘নিহতের স্বজনদের এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর লাশ দাফনের জন্য তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।’
ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান শনাক্তের পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর ডুবুরিরা সম্মিলতিভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। বুড়িগঙ্গার তলদেশে প্রায় ৫০ ফুট পানির নিচ থেকে একটার পর একটা লাশ তুলে আনেন তাঁরা।