একদিনে দুই উৎসবে ফুল বিক্রির ধুম!
আজ পয়লা ফাল্গুন। জীবনে আর একটি বসন্তের আগমন। বাংলার প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম মাস। ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে/ এত পাখি গায়…’ প্রকৃতিকে রাঙাতে ব্যস্ত পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়া; কচি সবুজ পাতা আর বাহারি ফুলেরা বসন্তের রঙে রঙিন করে তুলেছে প্রকৃতি। সেই রঙে কোকিলও মাতিয়ে তুলেছে কুহু কুহু সুরবীণায়।
আজ একই সঙ্গে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দুটি দিবসকে ঘিরেই ফুলের দোকানগুলোতে বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর সর্ববৃহৎ ফুলের বাজার শাহবাগ মোড়ের ফুলের দোকানগুলোতে ফুল বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে অনেকগুণ। তবে দুটি দিবস একই দিন হওয়ায় বিক্রেতারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানালেন তাঁরা।
এ বিষয়ে শাহবাগের ফুল বিক্রেতা জাকারিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রতিবছর দুটি দিবস উপলক্ষে দুদিন বই বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছর একই দিন দুটি দিবস পড়ে যাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শাহবাগে ৫০টি ফুলের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে প্রায় এক কোটি টাকার ফুল কেনা হয়েছে। আমি এক লাখ পাঁচ হাজার টাকার ফুল বিক্রির জন্য ক্রয় করেছিলাম। কিন্তু দুটি দিবস একই দিন হওয়ায় এখনো অর্ধেক ফুল বিক্রি করতে পারিনি। অন্যান্য বছর এক দিন কম বিক্রি হলে অন্যদিন বিক্রি করে পুষিয়ে নিতাম। কিন্তু এবার একই দিবসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
এদিকে দুটি দিবসকে ঘিরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ফুল। একটি গোলাপ প্রতিদিন যেখানে পাঁচ টাকা বিক্রি, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে মাথার রিং দিয়ে সাজানো ফুল বিক্রি হতো ২০ থেকে ৩০ টাকায়, তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
টিএসসি এলাকায় আমেনা খাতুন নামের এক ফুল বিক্রেতা বলেন, ‘বাবা আজকে আমরা বেশি দামে কিনে নিছি। তাই আজকে ফুলের দাম বেশি। একটি গোলাপ ৫০ টাকা আর ফুল দিয়ে সাজানো মাথার রিং বিক্রি করছি ১০০ টাকায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, টিএসসি, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তরুণ-তরুণীর পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের মানুষ ঘুরতে বের হয়েছেন। হলুদ শাড়ি, হলুদ পাঞ্জাবি পরে বাসন্তী সাজে নিজেকে রাঙিয়েছেন। একই সঙ্গে মেয়েদের মাথায় ফুলের বাহারি সাজ। কেউ বা হাতে গোলাপ নিয়ে ঘুরছেন।
অপরদিকে পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দোকানে ফুলের তোড়া তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফুল-শ্রমিকেরা। ফুল সাজানো আর বিকিকিনিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দোকানিরা।
সাধারণত প্রতিবছর এ দুই দিবসে ফুলের বিক্রির হার বেড়ে যায় বহুগুণ। এবারের চিত্রটিও ঠিক তাই। পয়লা ফাল্গুনে খোঁপায় তাজা ফুল নেই এমন তরুণী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আজ সকাল থেকেই শাহবাগ মোড়ের ফুলের দোকানগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট দোকানি ও কর্মচারীদের। সেখানে ভিড় জমিয়েছেন প্রচুর ক্রেতা। শুধু তরুণ-তরুণীরাই নন, মনে বসন্তের বাতাস লাগিয়ে ফুল কিনতে ছুটে এসেছেন বয়স্করাও। তবে ঝাঁকে ঝাঁকে কিংবা জোড়া মিলিয়ে আসা তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনকে ফুলেল ভালোবাসায় ছুঁয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে সবাই। তাই এ দুদিনে ফুল বিক্রির হার বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে বিশেষ এই দিবস পালনে ফুল হয়ে উঠেছে প্রধান আকর্ষণ। শুধু রাজধানীতে নয়, এ তিনটি দিবসে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
বসন্তের প্রথম দিন, ভালোবাসা দিবস এবং মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের সর্বাধিক চাহিদা থাকে। একই মাসে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বড় তিনটি দিবস হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। কয়েক বছর ধরে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ফুল বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় সুযোগ হিসেবে ধরে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ দুদিনে কয়েক কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট ও আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ফুলের পাইকারি মার্কেট থেকে সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারা ফুল কিনে থাকেন। রাজধানীর এসব বাজারে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন শুধু রাজধানীর পাইকারি বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশি ব্যবসা করার পরিকল্পনা নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার শাহবাগে।
এখানে রয়েছে ১২০টি ফুলের দোকান। খুচরা রয়েছে আরো শখানেক। অনেকের কাছে ফুলের একমাত্র প্রাপ্তিস্থান হিসেবে শাহবাগই পরিচিত। শহরের কেন্দ্রবিন্দু ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিকটবর্তী হওয়ায় শাহবাগে সংস্কৃতিমনাদের আনাগোনা বেশি থাকে, যারা ফুলের উল্লেখযোগ্য ক্রেতা। তবে ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে ভালো। দামও একটু বেশি থাকে।
জানা যায়, গতকাল থেকে পাইকারি বাজারে প্রতিটি দেশি গোলাপের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, জারবেরা ৩০ থেকে ৪০, গ্লাডিওলাস ৩০ থেকে ৩৫ ও রজনীগন্ধা ২০-২৫ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে। এ ছাড়া জুঁই-বেলির মালা ৪০-৫০ টাকা, গাঁদা ফুলের মালা ৪০-৫০ এবং ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক হাজার গাঁদা ফুলের ঝাড়।
এ ছাড়া লিলি ১৫০ টাকা, থাই-চায়না ও ইন্ডিয়ান গোলাপ ৬০ থেকে ১০০ টাকা। অর্কিড ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কানডিশন, লিমু, চেরিগেণ্ডা, ওয়েসস্টার, দেশি-বিদেশি নানান ফুল বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি থেকে খুচরা মূল্য দ্বিগুণ কিংবা তার চেয়েও অধিক।