‘ইসি গঠন নিয়ে আরেকটি নাটক শুরু করেছে সরকার’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার যে আইন করছে, তা জাতির সঙ্গে আরেকটি নাটক।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সুতরাং দেশের চলমান সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেডআরএফ।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার যে আইন করেছে, তা জাতির সঙ্গে আরেকটি নাটক। আমরা বলেছি—আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি কখনও কোনো নির্বাচনে যাবে না। কেননা, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন সরকারের স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সুতরাং এসব সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের কোনো বিকল্প নেই।’
জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা নয়, দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সব সেক্টরে অবদান রেখেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে জেডআরএফের আলোচনার জন্য ধন্যবাদ। আমি বলব—দেশের বিশেষ দুটি দিন। একটি—২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘উই রিভোল্ট’ বলে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তৎকালীন সেনাবাহিনীর তরুণ মেজর জিয়াউর রহমান। আরেকটি ঘটনা হলো—৭ নভেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করেছিল। কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করেছিল। রক্ষীবাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যা করে প্রথম মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল। তখন ক্যু আর পাল্টা ক্যু হচ্ছিল। তখন ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব যে সংঘটিত হল, সেটা হলো ইতিহাসের আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট।”
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, ‘আজ অনেকেই জিয়াউর রহমানকে হিংসা করেন। তাঁর নাম মুছে ফেলার জন্য এমন কোনো কাজ নেই, তারা করছে না। যারা জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করেন না, তারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না। অন্যরা তো তখন ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ ইচ্ছা করলে ইতিহাস মুছে দিতে পারে না।’
বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘শহীদ জিয়া দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে, আর বিএনপি তা বারবার পুনরুদ্ধার করেছে। এগুলো ইতিহাস। চাইলেই মুছে ফেলা যাবে না। তেমনি আজকে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আজ কারাবন্দি।’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে করে তারা সরকার গঠন করেছে। তারা বলে—জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। আসলে প্রধানমন্ত্রী নির্লজ্জ। আজকে আমেরিকার গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি। কারণ, বহির্বিশ্বে সবাই জানে—বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না, সে দেশে মানবাধিকার থাকে না। তাই, আওয়ামী লীগ আজ ১২ বছর ধরে গুম খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। এটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকারের বৈশিষ্ট্য। তারা ভেবেছিল—দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় টিকে থাকবে। এমনকি ২০০৪ সাল থেকে তারা বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। তবুও তারা তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছে। লবিস্টরাও ব্যর্থ হয়েছে। আজকে তাদের অপকর্মের কারণে আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান এবং কিছু কর্মকর্তার নামে স্যাংশন দিচ্ছে। তবুও তারা আমলে নিচ্ছে না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে বিশ্বাস করে না। কেননা, অতীতে জনগণ তাদের লালকার্ড দেখিয়েছে। যে কারণে তারা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর রাতেই করেছে। এখন চারদিক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ওয়ার্নিং দিচ্ছে। র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জাতিসংঘ আমলে নিয়েছে।’