‘ইভিএমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) মানা যাবে না। এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।’
আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বব্যাপী ইভিএম প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘এই যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই ভোট চুরি করা যাবে, যা বিশ্বের বহু দেশে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশেও ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই যন্ত্রের ব্যবহারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
গোলটেবিল আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে সভায় বক্তব্য দেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন কাজী মনিরুজ্জামান।
মূল প্রবন্ধে ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার চরম নৈরাজ্যকর, অব্যবস্থাপনা সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনের লাগাতার প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ বা তাদের প্রতি সীমাহীন অনাস্থার কারণে মানুষের মৌলিক ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য নতুন অনুষঙ্গ ইভিএমকে অনেকেই ভেল্কি মেশিন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যন্ত্র তো মানুষ তৈরি করেছে। সেটার নিয়ন্ত্রণ তো মানুষের কাছে। আপনি কোথায় ভোট দিলেন, সেটা তো ভোটাররা জানতে পারবেন না। আমাদের বেহায়া নির্লজ্জ নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হলে দিনের ভোট নাকি রাতে হবে না। তো, আপনি এর আগে কী করেছেন? যে যন্ত্র ব্যবহার করলে বিতর্ক থাকবে না, মামলার সুযোগ নেই, কোথায় ভোট দিলেন জানার সুযোগ নেই, তাহলে এর চেয়ে ভোট চুরির বড় মাধ্যম আর কী হতে পারে? ইভিএম মানা যাবে না। এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ৩০ জানুয়ারি ভোট চুরি হলে পরের দিন মাঠে নামতে হবে।’
মান্না আরো বলেন, ‘২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যে ভোট ডাকাতি হলো, তখন যদি আমরা মাঠে নামতাম তাহলে তারা সাহস পেত না। আসুন, তখন যেটা পারিনি ২০২০ সালে সেটা করি। কারণ, এটা বিএনপি, গণফোরাম বা অন্য কারো লড়াই নয়। যেখান থেকেই নির্দেশ আসুক, মাঠে নামতে হবে। এটা আমাদের ভোটাধিকার রক্ষার ও বাঁচা-মরার লড়াই।’
গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ইভিএম আমাদের ভোটাধিকার হরণ করবে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ভোটারদের কাছে থাকবে না। তারা ক্ষমতা দখল করতে যত ধরনের পদ্ধতি আছে, সব ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল তারা ঠিক করে রেখেছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়। তবে আমরা মনে করি, এই নতুন বছরের শুরুটা হচ্ছে সরকারের পতনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।’
প্রবীণ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘ইভিএম চাচ্ছে কে? সরকার ও নির্বাচন কমিশন। এর পেছনে কোনো সঠিক উদ্দেশ্য নেই। তারা নির্বাচন সামনে এলেই নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসেন। ২০১৪ সালে গোলমাল লাগিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন! এখন সিটি নির্বাচনে যদি রাত ৩টা বা ৪টার দিকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়! ভোট বানচালের জন্যই ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এই পদ্ধতি নিয়ে দিন দিন সংশয় বাড়ছে। ফলে সেটা ব্যবহার করা হলে ভোটারদের উপস্থিতি খুব কম হবে। তাহলে প্রতারণা করা সহজ হয়। ভোটাধিকার হরণ ও ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে ইভিএম ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন।’
আসন্ন সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় সব ধরনের মানুষের মাঝে গিয়ে ভোট চায়। মেয়র প্রার্থীদের কারো অভিজ্ঞতা নেই। তবে তারা সবাই কোটিপতি। সুতরাং আমাদের গণতন্ত্র এখন কোটিপতি গণতন্ত্র। আমরা কোটিপতিদের নিয়ে একটা প্রতারণামূলক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিয়ে যায়, সেখানে ইভিএমে আমাদের ভোট যে চুরি হবে না, সেটা কীভাবে বলা যায়? আমাদের গ্রামের সাধারণ মানুষ এখনো ইভিএমে অভ্যস্ত নয়। সুতরাং ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হোক।’