ইভিএমের জানাজা না জন্ম উৎসব করুন : ইসি মাহবুব
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এ নিয়ে নিজের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব আলম।
আজ বুধবার এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতভেদ আছে। ইভিএম ব্যবহারে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় এ ধরনের সমঝোতার রীতি গড়ে ওঠেনি।’
‘ইভিএম নিয়ে পূর্বে আমি ক্রিটিক্যাল থাকলেও দুটি কারণে আমি এখন ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। একটি হচ্ছে, এতে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি করার সংস্কৃতির অবসান ঘটতে পারে। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে শতকরা একশত ভাগ ভোট পড়ার যে অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি, ইভিএম ব্যবহারে তারও অবসান হবে’, যোগ করেন মাহবুব।
আজ বিকেলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঢাকা সিটি ভোট নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার এসব কথা বলেন।
ইসি মাহবুব বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদের ফলাফল, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, জাতীয় সংসদের ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। পৃথিবীতে কোনো নির্বাচনেই এ ধরনের ভোটার উপস্থিতির নজির নেই। রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি ও কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার অপবাদ থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই।’
‘যা হোক, ইভিএমের বিরুদ্ধবাদীদের বলতে চাই, বর্তমানের রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, যেকোনো অবস্থাতেই আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহৃত হবে। এর কোনো অন্যথা হবে না। যারা ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করছেন, তাদের বক্তব্য অনেক সময় তাদের সমর্থক ভোটারদের মনেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায়, তাদের সমর্থক ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ইভিএমে ভোট দিতে আগ্রহী হন, এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। আমার পরামর্শ হচ্ছে, ইভিএমের জানাজা না পড়ে বরং এর জন্ম উৎসব পালনের কথা বিরোধীরা ভাবতে পারেন। ’
চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘এতে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম বিহীন ব্যালট পেপারে যে ২৯৪টি আসনে ভোট হয়েছে, ভোটের হার যেখানে ছিল শতকরা ৮০ ভাগ, সেখানে ইভিএম ব্যবহারে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম ভোট পড়েছে। এর কারণ ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মনে আছে ইভিএম ভীতি। অন্যদিকে ইভিএমে জাল ভোট প্রদান প্রতিহত করা এক বিরাট সমস্যা। বুথ দখল করে বা গোপন কক্ষে গিয়ে জাল ভোট প্রদানের ঘটনা অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্মিলিতভাবে গোপন কক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। বর্তমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কমিশনের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি বৃদ্ধিও একান্ত অপরিহার্য। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে এই যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ। ’
মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, ‘এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ হলে শুধু নির্বাচন নয়, ইভিএম যন্ত্রটির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। আমার মতে, যেকোনো নির্বাচনে শতকরা ৫০ ভাগ ভোট না পড়লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এজন্য বিশ্বের অনেক দেশে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হয়। ইভিএম সম্পর্কে আমার বক্তব্যের বটম লাইন হলো, ইভিএমে যদি ৫০ শতাংশ ভোট না পড়ে, তাহলে ব্যালট পেপারে পুনরায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এজন্য নির্বাচনী বিধি-বিধান পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।’