আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সকালে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। ফলে অমর একুশে গ্রন্থমেলার বেশ কিছু স্টলের বই ভিজে গেছে। আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় রকমের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হলেও বেশির ভাগ স্টলের কিছু না কিছু বই ভিজে গেছে। মেলার মাঠেও কোথাও কোথাও পানি জমে ছিল। তবে দুপুরের পর মেলা প্রাঙ্গণ স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা গেছে।

আজ মেলা বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়। তার আগেই মেলার মাঠ দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত করে তোলা হয়। সকালের বৃষ্টি প্রভাব ফেলেনি বিকেলের উপস্থিতিতে। বিকেল ৩টার পর থেকে বইমেলায় মানুষ আসতে থাকে। গত চারদিনের মতো অতটা চাপ না থাকলেও স্টলে স্টলে বইপ্রেমী দর্শনার্থীদের বই কিনতে দেখা গেছে।

আজ মেলার শুরুতে বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

নতুন বই

মেলার ১৭তম দিনে এসে বাংলা একাডেমিতে নতুন বই জমা পড়েছে ৭১টি। গতকাল পর্যন্ত নতুন বই জমা পড়েছে এক হাজার ৯৯৯টি। গল্প-উপন্যাস-কবিতা-প্রবন্ধ-অনুবাদ-শিশুসাহিত্য সব ধরনের বই আছে এ তালিকায়। বাংলা একাডেমির হিসাব অনুযায়ী, সাহিত্যের বিভাগ অনুযায়ী বই জমা পড়েছে: গল্প ৩১৮টি, উপন্যাস ৩২৬টি, প্রবন্ধ ১১৯টি, কবিতা ৬০২টি, গবেষণা ২৯টি, ছড়া ৪৫টি, শিশুতোষ ৫৬টি, জীবনীগ্রন্থ ৬১টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ৫২টি, নাটক ১৬টি, বিজ্ঞানবিষয়ক বই ৩০টি, ভ্রমণকাহিনী ৩৩টি, ইতিহাসমূলক ৩০টি, রাজনীতিবিষয়ক ১৯টি, চিকিৎসাসংক্রান্ত ১২টি, রম্য ১৪টি, ধর্মীয় আটটি, অনূদিত বই ১০টি, সায়েন্স ফিকশন/গোয়েন্দা ২৩টি এবং বাকিগুলো অন্যান্য।

আলোচনা পর্ব

প্রতিদিন বইমেলার মূলমঞ্চে বিকেল ৪টার সময় শুরু হয় আলোচনা পর্ব। তবে আজ সেই সময় মেলা প্রাঙ্গণে বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে। আজকের আলোচনার বিষয় ছিল : সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক : শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খালেদ হোসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মফিদুল হক, আসাদ মান্নান, শিহাব সরকার ও আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি মনজুরে মওলা। এরপর শুরু হয় কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সংগীত সন্ধ্যা।

লেখক বলছি

অমর একুশে গ্রন্থমেলার এবারের সংযোজন ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে আজ উপস্থিত ছিলেন ছড়াশিল্পী লুৎফর রহমান রিটন, কথাশিল্পী ফরিদুর রহমান, কথাশিল্পী মারুফ রসুল, কবি স্নিগ্ধা বাউল ও কবি অঞ্জন আচার্য্য ।

এ মঞ্চে বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক উপস্থিত থাকেন। প্রত্যেকে ২০ মিনিট করে এই মেলায় প্রকাশিত বই নিয়ে কথা বলেন। সঞ্চালনায় থাকেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা।

অংশগ্রহণের পদ্ধতি

আগ্রহী লেখক বা বইয়ের প্রকাশক মেলার মূল তথ্যকেন্দ্রে এক কপি বই জমা দেবেন। বাংলা একাডেমির ভেতরে এই তথ্যকেন্দ্রে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বই জমা নেওয়া হয়। এর জন্য কোনো ফি লাগবে না। নির্বাচিত বইয়ের লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্ধারিত সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। বাংলা একাডেমি থেকে মনোনীত বই বাছাই উপকমিটি এই বই বাছাই করবে। বইয়ের প্রকাশকাল হতে হবে মার্চ ২০১৮ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৯।

মোড়ক উন্মোচন

মেলার ১৭তম দিনে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে মোড়ক উন্মোচন করা হয় ১২টি বইয়ের। গত ১৬ দিনে প্রায় পাঁচ শতাধিক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় বইমেলার এই মঞ্চে।

অংশগ্রহণের পদ্ধতি

আগ্রহী লেখক বা বইয়ের প্রকাশক মেলার মূল তথ্যকেন্দ্রে মোড়ক উন্মোচনের জন্য বই জমা দেবেন। এজন্য তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিতে হবে। বাংলা একাডেমির ভেতরে এই তথ্যকেন্দ্রে বিকেলে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বই জমা নেওয়া হয়।

আগামীকাল সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৮তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।