মেলায় বিক্রি হয়েছে ৮২ কোটি টাকার বই
মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হয়েছে গতকাল। বাংলা একাডেমির হিসাব অনুযায়ী, বইমেলায় সব মিলিয়ে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে চার হাজার ৯১৯টি। আর বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ৮২ কোটি টাকার বই।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’-এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ড. জালাল আহমেদ বলেন, গতবার ৩০ দিনে বাংলা একাডেমি মোট দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল। এবার ২ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৭ দিনে বাংলা একাডেমি দুই কোটি ২৮ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। গতকালের (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিক্রির হিসাব করলে বাংলা একাডেমির মোট বিক্রি দাঁড়ায় কমপক্ষে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা।
জালাল আরো জানান, গতবার (২০১৯) গ্রন্থমেলায় মোট ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। গতবার আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বই বিক্রি হয়েছিল। এবার ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং ২৯ ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায়, ২০১৯ সালের মোট বিক্রির চেয়ে অন্তত ৫ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে। ৫ শতাংশ বৃদ্ধি বিবেচনা করলে এবার কমপক্ষে ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
স্বাগত ভাষণে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘সব আয়োজনেই কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে; অমর একুশে গ্রন্থমেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের এবারের সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করে আগামীর আয়োজন আরও সার্থক ও সুন্দর করতে সচেষ্ট থাকব।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল কে এম খালিদ বলেন, ‘আজ যুগপৎ আনন্দ ও বেদনার দিন। আনন্দ এই কারণে যে আমরা সবাই মিলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ সফলভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি বেদনা এই কারণে যে, প্রাণের মেলায় আজ বেজে উঠেছে বিদায়ের রাগিণী। তবে মেলা শেষ হয়ে এলেও প্রাণে রয়ে যায় প্রাণেরই অনিঃশেষ রেশ। তাই আজ আমরা আনন্দকেই প্রধান করে তুলতে চাইছি।’
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে তাঁকে উৎসর্গ করে আয়োজন করা এই গ্রন্থমেলা ছিল তাঁকে উৎসর্গিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। কারণ অমর একুশে গ্রন্থমেলা বিশ্বের দীর্ঘসময়ব্যাপ্ত জ্ঞানের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে, তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি।’
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮ প্রদান
অনুষ্ঠানে সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়াকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই সাহিত্যিকের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, সনদ, ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়।