মা-বাবাসহ শিশুরা মেতেছে আনন্দে, খুশি বিক্রেতারাও

মায়ের হাত ধরে একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে বইমেলার শিশুপ্রহরে প্রবেশ করে সাইমুন খালিদি (৪)। শিশু কর্নারে গিয়েই মায়ের কাছে তার আবদার, ‘ছবিওয়ালা বই নেব মা।’ মাকে বইয়ের কথা বলেই সাইমুন শুরু করল বল নিয়ে খেলা। শুধু সাইমুন নয়, এমন কয়েকশ শিশু মা-বাবার হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেলার এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। যেন পুরো মেলা প্রাঙ্গণই আজ শিশুদের দখলে।
বইমেলায় আসা শিশুরা মা-বাবার পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে সাদা-কালো পোশাক পরে করে এসেছে। এসব শিশুর কেউ কেউ বই দেখছে, কেউ খেলা করছে, কেউ বা আবার সিসিমপুর দেখছে। তাদের মধ্যে আনন্দের শেষ নেই যেন। শিশুদের আনন্দ দেখে মা-বাবাও মেতেছেন আনন্দে। শিশুদের দেখে খুশি বিক্রেতারাও।
মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরতে দেখা যায় আড়াই বছরের রহিম রুমনকে। রহিম রুমন স্পাইডারম্যানের বই হাতে নিয়ে তার মাকে দেখাচ্ছে। সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করছেন তার মা সাহিদা আক্তার। পরে বইটি রহিমকে কিনে দিলেন তার মা।

সাহিদা আক্তার বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। স্পাইডারম্যান বইটি নিয়ে ছেলে আমার খুবই মজা পেয়েছে। সেটা দেখে আমারও খুব ভালো লেগেছে। এই মজাটার জন্যই আসা এখানে।’
বাবার সঙ্গে বইমেলার শিশুপ্রহরে এসেছে তাহমিনা চৌধুরী। তাহমিনা ‘সাহসী এক রাজকন্যার গল্প’ বইটি কিনেছে। আরো কয়েকটি বই কিনবে সে। তাহমিনা বলল, ‘গোপাল ভাঁড় আর পরীর দেশের মজার গল্প কিনব। এ ছাড়া আরো যে বই পছন্দ হবে, তা-ই কিনব।’
সকাল ৮টা থেকে শিশুপ্রহর শুরু হলেও সে সময় খুব কম শিশুকে দেখা যায় মেলায়। বেলা ১১টা থেকে মা-বাবার সঙ্গে শিশুরা মেলায় আসতে শুরু করে। কারণ এবার অনেকেই জানতেন না, সকাল ৮টা থেকে শিশুপ্রহর শুরু। গত বছরও বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়েছিল শিশুপ্রহর। মা-বাবার হাত ধরে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে গিয়ে বিচিত্র সব বইয়ে হাত বুলাচ্ছে শিশুরা। এসব দৃশ্য দেখে স্টলে থাকা বই বিক্রেতাও খুশি। বিক্রেতারা বলছেন, মেলা যেন আজ পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছে। শিশুদের আনন্দ দেখে তাঁদের খুব ভালো লাগছে।

শিশুদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিতে বেলা সাড়ে ১১টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণের শিশু চত্বরে কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছিল সিসিমপুর। শত শত শিশু সিসিমপুর দেখার জন্য উন্মুখ হয়েছিল। সিসিমপুরের মঞ্চে প্রথমে টুকটুকি এসে হাজির হলে সব শিশু চিৎকার করে টুকটুকিকে স্বাগত জানায়। টুকটুকি এসেই শিশুদের কাছে জানতে চায়, ‘তোমরা আমাকে চেন বন্ধুরা?’ তখন শিশুরা চিৎকার করে বলে, ‘চিনি।’ এরপর টুকটুকি বলে, ‘আমি বই পড়তে ভালোবাসি। তোমরাও বই পড়বে বন্ধুরা।’
এরপর গল্প, গান আর ছড়াতে মাতিয়ে রাখে টুকটুকি। শিশুরাও টুকটুকির সঙ্গে সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান, গল্প আর ছড়া বলতে থাকে। সে সময় টুকটুকি স্টেজের সামনে থাকা শিশুদের হাতে হাত মিলিয়ে পরিবেশটাকে আরো চমৎকার করে তোলে। এসব দৃশ্য শিশুরাই মুঠোফোনে ভিডিও করতে থাকে। এরপর একে একে স্টেজে হালুম, শিকু আর ইকড়ি আসে। তারাও নানা গল্প করতে থাকে শিশুদের সঙ্গে। এসবের ফাঁকে ফাঁকে উপস্থাপক শিশুদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘টুকটুকি, হালুম, শিশু আর ইকড়ি বই পড়ে। তোমরাও এদের মতো হতে চাও বন্ধুরা?’ শিশুরাও ‘চাই, চাই’ বলে চিৎকার করতে থাকে। তখন উপস্থাপক বলেন, ‘তাহলে বই পড়বে।’

শিশু চত্বরে শিশুদের সঙ্গে তাদের মা-বাবা কিংবা স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আরশিম তনুর মা ফাহামিদা আক্তার। মেয়ের আনন্দ দেখে তিনি বলেন, ‘তনু প্রতিদিন সিসিমপুর দেখে টিভিতে। আজ সরাসরি দেখে ভীষণ খুশি হয়েছে। ওর খুশি দেখে আমারও খুব ভালো লাগছে। এই সময় ধরে রাখার জন্য সব ভিডিও করে রাখছি।’
ফুলকি বইকেন্দ্রে থাকা বিক্রেতা রাজু আহম্মেদ বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে শিশুপ্রহর শুরু হলেও মূলত ১১টার দিক থেকে বেশি শিশু আসতে শুরু করে। এর আগেও এসেছে শিশুরা। আমার নিজের মেয়েও এসেছে। সব বাচ্চা স্টলগুলোতে এসে বইতে হাত বোলাচ্ছে, এর চেয়ে ভালো দৃশ্য আর কী হতে পারে? খুবই মজা পাচ্ছি। বিক্রির চেয়ে তাদের আগ্রহটা সুন্দর।’