মিয়ানমারকে মালয়েশিয়ার কড়া বার্তা, ‘যথেষ্ট হয়েছে’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ রোববার কুয়ালালামপুর স্টেডিয়ামে এই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাজিব রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চি ও তাঁর সরকারের প্রতি একটি শক্ত বার্তা জানাচ্ছি, তা হলো ‘যথেষ্ট হয়েছে’।”
মিছিলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরাসহ হাজার হাজার মুসলিমদের মাঝে চিৎকার করে নাজিব বলেন, ‘বিশ্ব বলতে পারে না, এটি আমাদের সমস্যা না। এটি আমাদের সমস্যা।’
বৌদ্ধ-প্রধান মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদেরও পীড়া দিচ্ছে। নাগরিকত্ব না পেয়ে কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ২০১২ সালে আন্তগোষ্ঠী সহিংসতায় রূপ নেয়। এ সহিংসতায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং অপরিচ্ছন্ন শিবিরগুলোতে এক লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে পুলিশ চৌকিতে গুপ্ত হামলার জের ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করায় এই সহিংসতা আবারও ছড়িয়ে পড়েছে।
পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মার্কিন কূটনীতিক ডেনিয়েল রাসেল বলেছেন, ‘এই সহিংসতা মিয়ানমার ও বাংলাদেশে জিহাদি চরমপন্থাকে উসকে দিতে পারে।’ এর পাশাপাশি তিনি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রতি বিক্ষোভকে প্রতিরোধ করার আহ্বান করেছেন। এই বিক্ষোভ আবারও ধর্মীয় অনুভূতিকে চাঙ্গা করতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নাজিব বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন করা হচ্ছে ইসলামকে অপমান করা।’ তিনি জানান, তিনি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জকো উইদোদোকেও মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার জন্য জাকার্তায় একই ধরনের বিক্ষোভ মিছিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ১০ সদস্যের অ্যাসোসিয়েশনের সনদে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ান সরকারের নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভ এক দেশ অন্য দেশের বিষয়ে আশিয়ান সদস্যদের হস্তক্ষেপ না করার দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে আসার শামিল।
নাজিব বলেন, ‘আমি আমার চোখ বন্ধ করে রাখতে পারি না এবং চুপ করে থাকতে পারি না। আমরা অবশ্যই তাদের (রোহিঙ্গা) রক্ষা করব। তারা একই ধর্মে বিশ্বাসী শুধু এই কারণে নয়, তারা মানুষ, তাদের জীবনের মূল্য রয়েছে।’
কয়েকজন সমালোচক অভিযোগ করেছেন যে, অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে নাজেহাল নাজিব সাধারণ নির্বাচনের আগে এই বিক্ষোভ মিছিলকে তাঁর দেশের মুসলিম মালয়দের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ব্যবহার করছেন। ২০১৮ সালে এই নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার আগেও হতে পারে।
গত শনিবার এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মালয়েশিয়ায় ৫৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নির্মূল’ বন্ধ করা এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এই ব্যাপারে মালয়েশিয়া মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গে দুটি ফুটবল ম্যাচও বাতিল করেছে। গত সপ্তাহে মিয়ানমার দূতাবাসের বাইরে শত শত মালয়েশিয়ান বিক্ষোভ করেছে।