বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে এখনো বিদ্যুৎ বিল!
বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এসেছে এক লাখ এক হাজার ৮১৬ টাকা ১২ পয়সা! মাসের পর মাস শেষ হয়ে গেলেও বিল দিচ্ছেন না তিনি।
নামটা ঠিকই পড়েছেন। যার নামে বিল এসেছে তাঁর নাম জগদীশ চন্দ্র বসু। গাছের প্রাণ আছে ব্যাপারটির প্রমাণ করেছিলেন প্রয়াত এই বিজ্ঞানীই। আর রেডিও আবিষ্কারের মূলেও আছে তাঁর নাম।
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ‘বিজলি বিতরণ নিগম লিমিটেডে’র ওয়েবসাইটে বিদ্যুৎ বিলের তথ্যটি দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ পেতেই রীতিমতো হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। পরে অবশ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, ‘অনেক বড় ভুল হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা আন্তরিকভাবে লজ্জিত।’
এরই মধ্যে ওয়েবসাইট থেকে তড়িঘড়ি এই তথ্য মুছে দিয়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কিন্ত তার আগেই প্রয়াত বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের খবর বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।
কিন্তু যে বাড়ির নামে বিদ্যুৎ বিল এসেছে বাড়িটি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুরই। ভারতের বিহার রাজ্যের গিরিডিতে একটি বাড়ি ছিল তাঁর। মৃত্যুর পর সেই বাড়ি সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন বিহার সরকার। কিন্ত পরে বিহার ভাগ হয়ে তৈরি হয় ঝাড়খণ্ড রাজ্য। গিরিডি পড়ে যায় ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আওতায়।
নতুন সরকার গঠনের পর জগদীশ চন্দ্র বসুর ওই বাড়িতে সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে ‘স্মারক জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র’ তৈরি করে প্রশাসন। তারপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা। বাড়িতে বিজ্ঞান কেন্দ্র তৈরি হলেও সেখানে মাসের পর মাস ধরে বিদ্যুতের বিল বকেয়া রেখে দেয় প্রশাসন। একটা সময় বকেয়া বিল জমা না করায় ওই বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা।
বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক বিনোদ মণ্ডল বলেন, ‘অনেক বার বিদ্যুৎ পর্ষদ থেকে চিঠি আসার পরও সর্বশিক্ষা মিশন সেই বিল পরিশোধ করেনি। ফলে ২০০৩ সালেও একবার বাড়িটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
তবে এবারে বাড়িটির বকেয়া বিদ্যুতের বিলের দায় কীভাবে প্রয়াত বিজ্ঞানীর কাঁধে বর্তায় তা ভেবে পাচ্ছে না কেউই। যদিও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই বাড়িটির এককালের বাসিন্দা জগদীশচন্দ্র বসুর নাম কোনোভাবে ভুল করে ওয়েবসাইটে আপলোড হয়ে গেছে। কারণ, একসময় জগদীশ চন্দ্র বসুর নামেই বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। তবে মারাত্মক এই ভুল খুব শিগগিরই শুধরে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গিরিডি জেলার তথ্য কর্মকর্তা শিবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওই বাড়ির দায়িত্ব এখন সর্বশিক্ষা মিশনের। তাই এই বিল মেটানোর দায়ও তাঁদের। অন্যদিকে সর্বশিক্ষা মিশনের ‘ডিস্ট্রিক্ট সুপারিনটেনডেন্ট অব এডুকেশন’ মাহমুদ আলম বলেন, ‘ওই বিলের মধ্যে ঝাড়খণ্ড তৈরি হওয়ার আগের কিছু বকেয়া বিল রয়েছে। যার দায় আমাদের নয়।’ তবে বিষয়টি গিরিডির জেলা শাসকের সঙ্গে কথা বলে একটি সমাধান সূত্রের মাধ্যমে বকেয়া বিল কিস্তিতে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।