গরুর মাংস নিষিদ্ধ, জেল-জরিমানার বিধান
অবশেষে ভারতের মহারাষ্ট্রে গরুর মাংস নিষিদ্ধ হলো। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মহারাষ্ট্র বিধানসভায় পাস হওয়ার দীর্ঘ ১৯ বছর পর সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এতে স্বাক্ষর করেছেন। ১৯৯৫ সালে বিজেপি-শিবসেনা ক্ষমতায় থাকাকালে মহারাষ্ট্র অ্যানিমেল প্রিজারভেশন (সংবিধান) বিলটি বিধানসভায় পাস হয়।
এই আইন অনুযায়ী, কারো কাছে মাংস পাওয়া গেলে বা কেউ বিক্রি করলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার রুপি জরিমানা হতে পারে।
১৯৭৬ সালের মহারাষ্ট্র অ্যানিমেল প্রিজারভেশন আইন অনুযায়ী, রাজ্যটিতে গরু জবাই করা অগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। নতুন আইনে ষাঁড় ও বাছুরও এর অন্তর্ভুক্ত হলো। তবে মহিষ এর বাইরে থাকবে। এটি নিম্নমানের মাংস হিসেবেই ধরা হয়। আর মূল মাংস চাহিদার মাত্র ২৫ ভাগ এই খাত থেকে আসে। মাংস ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, এই আইনের কারণে হাজারো মানুষ কাজ হারাবে। শুধু তাই নয় অন্যান্য মাংসের দামও বেড়ে যাবে।
গরুর মাংস নিষিদ্ধ হওয়ার পর পরই এক টুইটার বার্তায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনবি রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান। টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, গরু জবাই বন্ধ করা ছিল তাঁদের স্বপ্ন, যা বাস্তবায়িত হলো।
মহারাষ্ট্রে গরুর মাংস নিষিদ্ধকে বিজেপির প্রায় সব নেতাই স্বাগত জানিয়েছেন।
ভারতে গরুর মাংসকে গরিবের মাংস হিসেবে দেখা হয়। ভেড়ার মাংসের দাম গরুর মাংসের তিনগুণ। শুধু মুম্বাইয়ে নিবন্ধিত ও অবৈধ বিক্রেতারা প্রতিদিন গড়ে ৯০ হাজার কেজি গরুর মাংস বিক্রি করে। গরুর মাংস বিক্রেতারা জানিয়েছে, তারা এর বিরুদ্ধে আদালতে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন আইনের কারণে মাংস বিক্রেতাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষকরা। বুড়িয়ে যাওয়া গুরু কৃষকরা মাংসের জন্য বিক্রি করে দিত। এখন থেকে এই পথ আপাতত বন্ধ।
ভারতীয় মাংস বিক্রেতাদের সংগঠন জামিয়াতুল কুরেশের কর্মকর্তা আরিফ চৌধুরী বলেন, বৃদ্ধ ও পরিশ্রম করানো সম্ভব নয় এমন গরু জবাইয়ের সুযোগ না দিয়ে সরকার কৃষকদের প্রতি চরম অবিচার করছে।
এরই মধ্যে মহারাষ্ট্রের গরুর মাংস বিক্রেতারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। হয়রানির প্রতিবাদে মাংস বিক্রেতারা এক সপ্তাহ কর্মবিরতি পালন করছে। পরে মুখ্যমন্ত্রী ফাদনাভিস মাংস বিক্রেতাদের সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে মাংস বিক্রেতারা কর্মবিরতি বন্ধ করে।
মাংস বিক্রেতা ও কৃষদের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক কাবাব ও হোটেল ব্যবসায়ী। মুম্বাইয়ের স্মোক হাউস ডেলির রাঁধুনি গ্লাইস্টোন গ্রেসিয়াস বলেন, রাজ্যের সিদ্ধান্তে তিনি আশাহত। এখন তাঁকে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। কারণ ওই রেস্টুরেন্টের বেশির ভাগ খাবারই ইউরোপীয় ঘরানার। এসব খাবার তৈরিতে গরুর মাংস ব্যবহার হয়। মহরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বিদেশিরাও মাংসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে।