পশ্চিমবঙ্গে পৌর নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা, নিহত দুই
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পৌরনিগম নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ভোট সন্ত্রাস ও সংঘর্ষের জের ধরে নিহত হয়েছেন দুই কংগ্রেস কর্মী। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো অনেকে।
আর এসব ঘটনার জন্য অভিযোগের তীর উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
আজ শনিবার পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগর, আসানসোল, হাওড়া ও বালিপুর এলাকার নির্বাচন ছিল। একই সঙ্গে এদিন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এবং রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির উপনির্বাচনও ছিল।
সকালে ভোট শুরুর প্রথম থেকেই শুরু হয়ে যায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, বহিরাগত ঢুকিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, বোমাবাজি, গুলি-সব মিলিয়ে দিনভর টানটান উত্তেজনার মধ্যে চলে ভোটগ্রহণ। উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া থানার পাথরবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতে চলে ব্যাপক বোমাবাজি। বোমার আঘাতে মারা যান ইমদাদুল শেখ এবং ফুক্তার আলী নামে দুই কংগ্রেস কর্মী। এ ছাড়া স্থানীয় ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময় কংগ্রেস প্রার্থী জয়ন্তী ঘোষের স্বামী রণদীপ ঘোষকে অপহরণও করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
দুই ঘটনাতেই অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে আজ সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছিল কলকাতার অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত বিধাননগরে। শাসক দল পরিকল্পিতভাবে বহিরাগত ঢুকিয়ে ব্যাপক হারে ভোট লুট করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।
তৃণমূলের এসব লাগামহীন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাজ্যের সিপিএম নেতা গৌতম দেব আগামী সোমবার বিধাননগর এবং রাজারহাটে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছেন। অন্যদিকে আসানসোল পৌর এলাকায় তৃণমূল নেতা বৈজি ঠাকুর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে সিপিএম এবং বিজেপির বিরুদ্ধে।
আজ সারা দিন ভোটের উত্তাপ থেকে বাদ পড়েননি গণমাধ্যমকর্মীরাও। বিধাননগরের বেশ কিছু জায়গায় বহিরাগতদের হাতে আক্রান্ত হন সাংবাদিক এবং চিত্রসাংবাদিকরা।
দিনশেষে ভোটের নামে প্রহসন চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীপক্ষ। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বিরোধীরা ভোট বানচাল করার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাস চালিয়েছে।
সিপিএম নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেন, তৃণমূল ভয় পেয়ে বেআইনিভাবে ভোট লুট করেছে। বহিরাগতদের নিয়ে এসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে।
এ বিষয়ে কংগ্রেস নেতা প্রসেনজিত ঘোষ জানান, তৃণমূল লাগামহীন সন্ত্রাস চালিয়ে কার্যত ভোটের নামে প্রহসন করেছে।
তবে বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের পক্ষে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, বিক্ষিপ্ত যে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে তা বিরোধীরাই সৃষ্টি করেছে। হেরে যাওয়ার ভয়ে শান্তিপূর্ণ ভোটকে বানচাল করতে বিরোধীদের এই চক্রান্ত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অবশ্য এত কিছুর পরেও ভোট সন্ত্রাস বিষয়ে আজ দুপুর পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি নির্বাচন কমিশন।