মোদি-ট্রাম্প ফোনালাপে রোহিঙ্গা ইস্যু
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা প্রসঙ্গের বিষয়টিও আসে বলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মূলত দ্বীপদেশ মালদ্বীপে চলমান রাজনৈতিক সংকট দুই নেতার ফোনালাপে প্রাধান্য পেলেও এর বাইরে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা, উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গও এসেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁদের মধ্যে এই ফোনালাপ হয়। নতুন বছরে এটিই তাঁদের প্রথম ফোনালাপ।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ছয় লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই নেতা। রোহিঙ্গারা এরই মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার রোডম্যাপ নিয়েও কথা বলেন তাঁরা।
তবে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্যে এটা ‘সঠিক সময় নয়’ বলে বিশ্বাস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে মালদ্বীপে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন মোদি ও ট্রাম্প।
সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ নয় নেতাকে আদালতের মুক্তি এবং বরখাস্ত ১২ নির্বাচিত সংসদ সদস্যের স্বীয় পদে বহাল রাখার আদেশে সুপ্রিম কোর্টের সরাসরি বিরোধিতা করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। নির্দেশ অমান্য করে তিনি ১৪৪ ধারা জারি করেন। আদেশ অমান্য করায় প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের মুখে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকার।
এ কারণে জরুরি অবস্থা জারির সঙ্গে সঙ্গে দেশটির প্রধান বিচারপতিসহ দুই বিচারপতিকে গ্রেপ্তারের পর বন্দিদের মুক্তির আদেশ পাল্টে ফেলে সুপ্রিম কোর্ট।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রতি সেখানে সেনা পাঠানোর আহ্বান জানান। বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় নির্বাসনে থাকা নাশিদ ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে বন্দিদের মুক্ত করতে মালদ্বীপকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলার আহ্বানও জানান। যদিও মালদ্বীপে বিপুল বিনিয়োগ থাকা চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম সেখানে ভারতের সেনা হস্তক্ষেপের ব্যাপারে চূড়ান্ত সতর্ক করে দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ অবস্থায় দেশটির গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর জোর দেন।
গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের কাছে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটির গুরুত্ব নানা কারণে বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এর পেছনে রয়েছে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড’ নীতির আওতায় ‘স্ট্রিং অব পিয়ারলস’ বা ‘মুক্তোর মালা’র পথরেখা, যা চীনের মূল ভূখণ্ডকে সুদূর আফ্রিকা মহাদেশকে জলপথে সংযুক্ত করবে। এই পথের অন্তর্ভুক্ত মালদ্বীপ। ফলে অতীতে ভারতের একচ্ছত্র প্রভাবে থাকা মালদ্বীপের বর্তমান রাষ্ট্রপতি এখন অনেকটাই চীনের ঘনিষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন।
পাশাপাশি গোটা এশিয়ায় চীনের ‘ইতিবাচক প্রভাব’ বাড়তে থাকায় মার্কিন প্রশাসন ও ভারত সরকারের মধ্যে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কও দিন দিন বাড়ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।