মেয়ের হত্যাকারীর হুমকি, বিষ খেয়ে আত্মঘাতী বাবা
মেয়ের হত্যাকারীদের হুমকির জেরে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হলেন বাবা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার জেলা সদর বারাসাতসংলগ্ন হৃদয়পুরে।
প্রায় এক বছর আগে হৃদয়পুরের বাসিন্দা প্রবীর পাল তাঁর স্ত্রী নিতা পালকে খুন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, এক রাতে নীতাকে ঘরের মধ্যে একটি চেয়ারে বেঁধে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘরের মধ্যেই জ্বলন্ত পুড়ে মারা যান নীতা।
সেই ঘটনা দেখেন নীতা ও প্রবীর পালের দুই বছরের শিশুকন্যা। পরে শিশুটির জীবন বাঁচাতে নীতা পালের বাবা খোকন সাহা তাকে নিজেদের মধ্যমগ্রামের বাড়ি নিয়ে আসেন।
ঘটনার তদন্তে নেমে বারাসাত থানার পুলিশ নীতার মেয়ের বক্তব্য শোনে এবং নীতা পালের স্বামী প্রবীর পাল, দুই কাকাশ্বশুর তন্ময় পাল, সুবীর পাল, শ্বশুর গৌতম পাল ও শাশুড়ি গীতা পালকে গ্রেপ্তার করে।
যদিও প্রবীর পাল ও তাঁর পরিবারের দাবি, নীতা নিজেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।
এরপর মামলা চলতে থাকে বারাসাত আদালতে। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে কয়েক মাস আগে আসামিরা জামিন পান। কলকাতা হাইকোর্ট আসামিদের জানিয়ে দেন, স্থানীয় থানায় না জানিয়ে তাঁরা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় ঢুকতে পারবেন না।
অভিযোগ রয়েছে, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই আসামিরা নীতার বাবা খোকন সাহাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। খোকন সাহা ও তাঁর স্ত্রী বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় মধ্যমগ্রাম থানাতেও একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা তুলে না নিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় খোকন সাহাকে।
পরিবারের অভিযোগ, ক্রমাগত হুমকির মুখে এবং প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন খোকন সাহা। ফলে তিনি নিজের বাড়িতেই কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রথমে বারাসাত হাসপাতাল ও পরে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল শনিবার সকালে সেখানেই মারা যান খোকন সাহা।
এ ঘটনার পর ফের নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। জানা যায়, মৃত্যুর আগে খোকন সাহা হাসপাতালের বেডে শুয়ে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে পুলিশকে বয়ান দেন। পুলিশ সেই বয়ানের ভিত্তিতে জামিনে মুক্ত আসামিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।
এ বিষয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিত মুখোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।