রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ঐকমত্য : কফি আনান
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে এবং সেনা অভিযান বন্ধ করে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান।
কফি আনান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে চাপ দিতে শুরু করেছে।’
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সভা শেষে কফি আনান সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
কফি আনান আরো বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে দেশে ফিরিয়ে আনার পর কোনো শরণার্থী শিবিরে নয়, নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে তাদের বাড়িতে পাঠাতে হবে।
ভেটো প্রদানে সক্ষম জাতিসংঘের দুই সদস্য দেশ ফ্রান্স ও ব্রিটেন রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও ফ্রান্সের স্থায়ী প্রতিনিধি ফ্রাসোয়া ডিলাটরা বলেন, ‘জাতিগত নিধনের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পাঁচ লাখ ২০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে উদ্বাস্তু করেছে। আমরা এমন ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।’
নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকটের জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করেছে ব্রিটেন। দেশটির নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী প্রতিনিধি ম্যাথিউ রেক্রফট বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য একমত হয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাদের চলানো সামরিক অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অভিযানের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরও ফিরিয়ে আনতে হবে।
গত আগস্টে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কফি আনান কমিশন সুপারিশমালা মিয়ানমার সরকারের কাছে পেশ করা হয়। কফি আনানের নেতৃত্বে পরিচালিত সেই সুপারিশমালায় উল্লেখ করা হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নেই, তাদের অবশ্যই নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিক সুরক্ষা দিতে হবে, স্বাধীনভাবে চলাচল, অর্থনীতি ও শিক্ষার সুযোগ-সুবিধাও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেওয়ার সুপারিশ করা হয় ওই সুপারিশমালায়।
কফি আনান বলেন, ‘সুপারিশমালায় আমরা রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো তুলে ধরেছি এবং এর ভিত্তিতে সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি।’
কফি আনানের এই সুপারিশমালা প্রদানের পরই গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সংকট তৈরি হয়। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) মিয়ানমারের কয়েকটি সামরিক ক্যাম্পে হামলা করলে পাল্টা অভিযান হিসেবে সামরিক সেনারা ‘শুদ্ধ অভিযান’ শুরু করে। সেনা অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ ও উচ্ছেদের মুখে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংকট সমাধানই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সুপারিশালায় এর কোনো বিকল্প কিছু নেই।
রোহিঙ্গা সংকটের কারণে মিয়ানমার জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন জাতিসংঘের সাবেক এই মহাসচিব।