হামলার প্রস্তুতির ছবি প্রকাশ কিমের, যুক্তরাষ্ট্রে ‘ভুল’ রেডিও সতর্কবার্তা
উত্তর কোরিয়া না যুক্তরাষ্ট্র—থামছেন না কেউই। একজন এই হুমকি দেয় তো আরেকজন আরেক। একজন সকালে একটি কথা বললে বিকেলে আরেকজন আরো দুটি কথা উপরি শুনিয়ে দেয়। এভাবেই চলছে বিশ্বের মোড়লরাষ্ট্র বলে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্র আর কোরীয় উপদ্বীপের দেশ উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধাবস্থাকালীন পরিস্থিতি।
‘যুদ্ধাবস্থাকালীন পরিস্থিতি’ শব্দটি ব্যবহার করছে সংবাদমাধ্যমগুলোও। কারণ আজ মঙ্গলবার আবার পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটি গুয়ামে হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়া।
গুয়ামে অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনার বিষয়টি অবশ্য উত্তর কোরিয়ার কাছে নতুন কিছু নয়। গত সপ্তাহেই ওয়াশিংটনকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছিল পিয়ংইয়ং। এখনই মার্কিন মূল ভূখণ্ডে হামলা না চালিয়ে বরং গুয়াম দ্বীপে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া।
আর মঙ্গলবার এই হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা ও কিছু ছবি প্রকা্শ করেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-উন। ওই ছবিতে দেখা যায়, যুদ্ধকালীন একটি কন্ট্রোলরুমে সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে আছেন কিম। গুয়ামের মানচিত্রের সামনে বসে দেখছেন ক্ষেপণাস্ত্র হানার পরিকল্পনা। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র- যেটি গুয়ামে হামলা করবে বলে উল্লেখ করেছে দেশটি।
এদিকে কিমের এই ছবি প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যে গুয়ামের রেডিওতে জরুরি বিপদ সতর্কতা জারি করা হয়। অবশ্য আগেই গুয়ামের বসবাসকারীদের জানানো হয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলেই রেডিও, টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারি সতর্কবার্তা দিয়ে জানানো হবে। বাজবে সাইরেনও। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎই গুয়ামে সেই সতর্কবার্তা জারি হয়। দুপুর ঠিক ১২টা ২৫ মিনিটে রেডিওতে প্রচারিত ওই সতর্কবার্তায় গুয়ামবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, ভুল করে জরুরি বিপদকালীন সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সব কথা বিশ্বাসের কারণ নেই। গুয়ামের ক্ষতি করার ক্ষমতা উত্তর কোরিয়ার নেই।
এর আগেই ট্রাম্পই উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা গুয়ামের কোনো ক্ষতি করলে উত্তর কোরিয়াকে ‘মহাঝামেলা’য় ফেলা হবে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের বেডমিনস্টারে নিজ গলফ রিসোর্টে এমন হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, গুয়ামের কিছুই হবে না। এই অঞ্চলটি ‘খুবই নিরাপদ থাকবে, আমাকে বিশ্বাস করুন।’
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলবেন।
জুলাইয়ে দুটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর কয়েকদিন পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত একটি নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব পাস হয়। এর পরপরই চটে যায় কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন উত্তর কোরিয়া।
দেশটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ামে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। সর্বোচ্চ নেতা কিমের অনুমতি পেলেই এগুলো ছোড়া হবে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর কোরিয়া উপদ্বীপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান এই টানটান উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ বলেন, সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ‘খুবই বেশি’। এমন বাস্তবতায় সমস্যা সমাধানে রাশিয়া ও চীনের যৌথ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেন, সামরিক পথে সমস্যার সমাধান হবে না। বাকযুদ্ধ বাড়ানো ভুল পথ।