অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গাকে সৈন্যদের ধর্ষণ, ছেড়ে গেলেন স্বামীও
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মিয়ানমারের সৈন্যদের ধর্ষণের শিকার হওয়া রোহিঙ্গা নারীদের ছেড়ে চলে গেছেন তাঁদের স্বামীরাও। স্বামী পরিত্যক্তা এসব নারী এখন প্রচণ্ড অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করছেন।
বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে রাখাইন প্রদেশের কায়ার গং টং গ্রামের বাসিন্দা স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী আয়মান বেগম জানান, রাখাইনের গ্রামগুলোতে মিয়ানমারের সৈন্যদের অভিযান থেকে বাঁচতে পুরুষরা সব পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা পেছনে ফেলে গিয়েছিলেন শিশু, নারী আর বৃদ্ধদের।
রোহিঙ্গা মুসলিম আয়মান বেগম আরো জানান, তিনি ছিলেন পেছনে ফেলে যাওয়া নারীদের একজন। সেনা অভিযান চলাকালীন তিনি ছিলেন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবু দয়া হয়নি মিয়ানমারের সেনাদের।
ছোট্ট একটি মেয়েশিশুকে কোলে নিয়ে ২০ বছর বয়সী আয়মান বেগম বলেন, সন্তান প্রসবের মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। ‘আমার তখন নয় মাস চলছিল। তারা জানত আমি গর্ভবতী কিন্তু তাতেও দমেনি তারা।’ বলেন ওই নারী।
এরপর স্বামী ফিরে এলে তাঁকে আয়মান বেগম ঘটনাটি জানান। বলেন, তাঁর গর্ভাবস্থার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে মিয়ানমারের সৈন্যরা তাঁকে ধর্ষণ করে। এ কথা জেনে তাঁর স্বামীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এর পর থেকে খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে জীবনধারণ করছেন আয়মান।
শুধু আয়মান বেগমই নন, দুই সন্তানের মা হাসিনা বেগমও জানালেন তাঁর করুণ পরিণতির কথা। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এর জন্য তাঁকে অভিযুক্ত করেছেন তাঁর স্বামী। এরপর পরিত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন। কারণ গত ডিসেম্বরে তিনজন সৈন্য তাঁকে ধর্ষণ করেছিল।
মিয়ানমারের বহু রোহিঙ্গা নারী বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদকের কাছে রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর মাসের পর মাস চলা ‘নির্মূল অভিযানের’ সময় ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন।
কায়ার গং টংয়ের রোহিঙ্গারা বলছে, তাদের গ্রামে ১৫টির মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে তিনটি ধর্ষণের ব্যাপারে তারা মামলা করেছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বাকিরা ভবিষ্যৎ হয়রানির আশঙ্কায় অভিযোগ জানাতে চায়নি।
মাসের পর মাস চলা অভিযানের সময় বহু মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।
সৈন্যদের ধর্ষণ করার এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে মিয়ানমারের সরকার। এই অভিযোগগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করাও সম্ভব হয়নি।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সীমান্তের জাতিগত সংঘাতগুলোতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
আর জাতিসংঘের আশঙ্কা, রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মাসের পর মাস চলা ‘নির্মূল অভিযান’ এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান।