পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনায় সংঘর্ষ, বন্ধ ইন্টারনেট
ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে এক শিক্ষার্থীর আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুরিয়া। শুক্রবারের পর থেকেই এলাকাটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ।
আজ বুধবার সকালেও বাদুরিয়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে সড়ক ও ট্রেন অবরোধ। জেলার অন্যতম সড়কপথ যশোর রোড ও টাকি রোডে বিক্ষিপ্তভাবে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের বাদুরিয়ার রুদ্রপুরের বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র মহানবীকে (সা.) নিয়ে রোববার একটি ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করে। ফেসবুকে সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাদুরিয়াসহ গোটা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা। সোমবার সকালে ওই ছাত্রের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের একাধিক গাড়ি।
ওই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে চার দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বাদুরিয়া থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে থাকে বসিরহাট, দেগঙ্গা, স্বরূপনগর, হাড়োয়া, আমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জায়গায়। বাদুরিয়ার মলয়পুরে পুলিশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করতেই জনতা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা আটকদের পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিতে গেলে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
বাদুরিয়ার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাস্তায় নামানো হয় বিএসএফ সদস্যদের। বারাসত থেকে বসিরহাটে যাতায়াতের টাকি রোড এবং বাদুরিয়ার রাস্তায় রাস্তায় টহলে নামে বিএসএফ সদস্যরা। বন্ধ করে দেওয়া হয় বসিরহাট, বনগাঁ এবং বারাসত মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইন্টারনেট ও কেবল পরিষেবা।
স্থানীয় লোকজন জানান, মঙ্গলবার রাতেও বসিরহাটের বিভিন্ন জায়গায় বোমাবাজি চলেছে। আতঙ্কে ঘর ছেড়েছেন বহু মানুষ।
মঙ্গলবার রাত থেকেই বসিরহাটের হবিবপুর, ময়লাখোলা ও মৈত্রপাড়ার বাসিন্দারা ঘর ছাড়তে শুরু করেন। তবে বুধবার সকালেও উত্তেজনা কমেনি।
উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের ঘোজাডাঙ্গা এবং বনগাঁর পেট্রাপোলে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতের সীমান্ত। যশোর রোড ও টাকি রোড দিয়ে এবং শিয়ালদহ-হাসনাবাদ ও শিয়ালদহ বনগাঁ শাখার ট্রেনে করেই মূলত যাতায়াত করেন যাত্রীরা। বুধবার সকালে ট্রেন ও সড়কপথে দফায় দফায় অবরোধের জেরে এসব সীমান্তে এসে বহু বাংলাদেশি ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যা ও আতঙ্কে পড়েছেন। তবে বাদুরিয়ার ঘটনায় আর নতুন করে হিংসা ছড়ালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।