সাপেকাটা ছাত্রীকে ডাক্তার বলল মৃত, কেরামতি চালালেন ওঝা
সাপেকাটা এক স্কুলছাত্রীকে চিকিৎসক মৃত্যু সনদ দেওয়া সত্ত্বেও কবর থেকে তুলে কেরামতি চালালেন ওঝা। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে। কবর থেকে মৃতদেহ তুলে মিথ্যে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে ঝাড়ফুঁক করার অপরাধে দুই ওঝাকে এরই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসিরহাটের সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের বেড়মজুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শাকদহ গ্রামের বাসিন্দা সেরিনা খাতুন (১২)। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সে। গত সোমবার ঈদের দিন সে বাড়ি থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার লেদার কমপ্লেক্স থানার আমলাশয় গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে যায়। সেখানে সোমবার গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে বিষধর সাপে কামড়ায় সেরিনাকে। এরপর মঙ্গলবার ভোরে তাকে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরো জানা যায়, এর পরই সেরিনার মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় তার নিজের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের সন্দেশখালির শাকদহ গ্রামে। সেখানে কবর খুঁড়ে তাকে দাফন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেরিনার মৃতদেহ কবরে ঢোকাতেই স্থানীয় কিছু মানুষজন দাবি করে, সেরিনাকে বসিরহাট ধলতিতা এলাকার এক ওঝার কাছে নিয়ে গেলে তার প্রাণ ফিরে আসবে। সেই মতো কবর থেকে মৃত সেরিনাকে তুলে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় বসিরহাটের ধলতিতা এলাকার ওঝা সাবের আলীর কাছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে দীর্ঘক্ষণ ধরে সাবের আলী মৃত সেরিনা খাতুনের ঝাড়ফুঁক দেন। কিন্ত কোনো ফল না পেয়ে অগত্যা সে ডেকে নেয় তার গুরু বৃদ্ধ মাওলানা গুলশান রহমান সরদারকে। দুজনে মিলে প্রায় ঘণ্টা চারেক করেন ঝাড়ফুঁক। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে হতাশ হয়ে পড়েন তাঁরা।
এদিকে, সাপেকাটা মৃত ছাত্রীকে কবর থেকে তুলে ঝাড়ফুঁক করানো হচ্ছে জানতে পেরে গ্রামের কিছু মানুষ খবর দেয় বসিরহাট থানায়। পুলিশ এসে মৃত সেরিনার দেহ ওঝাদের হাত থেকে উদ্ধার করে। সেইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় ওঝা সাবের আলী এবং তাঁর গুরু মাওলানা গুলশান রহমান সরদারকে।
অন্যদিকে, মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সেরিনার বাবা হয়তালি শেখ ও মা শাহানারা বিবি। কাঁদতে কাঁদতে বাবা বলেন, ‘আমাদের মেয়েকে ওই দুই ওঝা বলেছিল প্রাণ ফিরিয়ে দেবে। সেই আশায় আমরা বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু শুধুই মরা মেয়ের পেছনে টাকা পয়সা ব্যয় করলাম আমরা। মেয়ে বাঁচল না।’
এই ঘটনায় বসিরহাটের যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্য রঞ্জিত মুখার্জি বলেন, মানুষের মধ্যে এখনো সচেতননতার অভাব রয়েছে। বিজ্ঞানের এই যুগে এখনো মানুষ ওঝার আশ্বাসে মৃতদেহ কবর থেকে তুলে তাদের কাছে নিয়ে যায়। যা আমাদের সমাজের লজ্জা।