যেখানে একলা নারী নিষিদ্ধ
নূপুর সারাসওয়াত একজন প্রবাসী ভারতীয় শিল্পী। থাকেন সিঙ্গাপুরে। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গোটা ভারত ভ্রমণ করতে হয় তাঁকে।
গত শনিবার সকালে সিঙ্গাপুর থেকে সরাসরি ভারতের হায়দরাবাদে যান ২২ বছর বয়সী নূপুর। কিন্তু যে হোটেলে তিনি উঠতে চেয়েছিলেন সেখানে ওঠার অনুমতি পাননি। কারণ তিনি একলা নারী।
এ ঘটনার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নূপুর লেখেন, ‘তো, আমি হায়দরাবাদের একটি হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, কারণ তারা আমাকে সেখানে থাকার অনুমতি দেয়নি। কারণ তারা জেনেছে, আমি একজন একা নারী। আর হোটেলে বুকিং কনফার্ম করার পর তারা এটা জানতে পেরেছে।’
ফেসবুকে বিষয়টি প্রকাশের পর তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। নূপুরের এই পোস্টটি শেয়ার করতে থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা। কিছু সময়ের মধ্যে হাজার ছাড়িয়ে যায় পোস্টের শেয়ার সংখ্যা। বাড়তে থাকে লাইকসহ বিভিন্ন রিঅ্যাকশন।
নূপুর লেখেন, ‘একটা লম্বা ভ্রমণের পর বিরাট ব্যাগ নিয়ে আমি হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। কারণ তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি হোটেলের চাইতে রাস্তায় বেশি নিরাপদ। মজা লাগছে? এভাবেই পুরুষতন্ত্র কাজ করে।’
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো একলা নারীকে হোটেলে থাকতে দেওয়া তাঁদের নীতিমালা বিরোধী। সে কারণে নুপুরকে তাঁরা থাকতে দিতে পারেন না। যেহেতু নূপুর হোটের বুকিংয়ের ওয়েবসাইট গো আই বিবো ডটকমের মাধ্যমে বুকিং দিয়েছিলেন তাই হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সঙ্গে তারাও সমালোচনার মুখে পড়ে। কারণ তারা নূপুরের জন্য এমন হোটেলের ব্যবস্থা করেছে যেখানে একলা নারী থাকতে পারেন না।
টুইটারে নূপুর লিখেছেন, ‘যদি ওই হোটেলে একলা নারীর থাকার ব্যবস্থাই না থাকবে তাহলে গো আই বিবো কেন আমার লিঙ্গ এবং কতজন থাকবো সেই তথ্য নিল?’
এ বিষয়ে নূপুর এনডিটিভিকে জানান, ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর গো আই বিবোর একজন প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জানান, পরবর্তী সময়ে তাঁদের ওয়েবসাইটে আরো যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থার রাখবেন তাঁরা। সেইসাথে আরেকটি হোটেলে নুপুরকে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়।
ঘটনা সম্পর্কে এনডিটিভির প্রতিবেদন দেখে গো আই বিবো ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনীষ কাশ্যপ টুইটারে জানান, এ ধরনের বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তাঁরা। সেইসঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আগ পর্যন্ত ওই হোটেলটিকে তাঁদের তালিকার বাইরে রাখছেন।
অবশ্য এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্যও জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলছে, একলা নারীর থাকার বিরুদ্ধে তাঁরা নয়। কিন্তু তাঁদের পক্ষে একলা নারী বা অবিবাহিত দম্পতিদের হোটেলে কক্ষ ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয়।
বিষয়টি নিয়ে নূপুর সারাসওয়াত এনডিটিভিকে আরো বলেছেন, এই ঘটনা অনলাইনে বুকিং দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার শিক্ষা দিল। তিনি বলেন, ‘একলা ভ্রমণ করেন এমন নারীদের জন্য নিরাপদ স্থান চাই আমি।’
ফেসবুক পোস্টে নূপুর লিখেছেন, ‘অনেকেই আমাকে বলেছেন যে, যেহেতু ওই হোটেলটির নীতিতেই একলা নারীকে কক্ষ ভাড়া দেওয়ার নিয়ম নেই সেহেতু কেন বিষয়টি নিয়ে আমি এত হইচই করছি। আমি হইচই করছি কারণ আমি এখনই সংসারে থিতু হওয়ার জন্য প্রস্তুত নই। আমি আর নিরাপত্তার ভয় নিয়ে বাঁচতে চাই না। আমি চাই না, সবাই মিলে আমাকে ভ্রমণের জন্য একজন পুরুষ সঙ্গী বেছে নিতে চাপ দিক।’