রাশিয়ার সঙ্গে গোপন যোগাযোগ ছিল ট্রাম্প জামাতার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের জামাই ও ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক পরামর্শক জেরার্ড কুশনারের সঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের গোপন যোগাযোগ ছিল। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে কুশনার অন্তত তিনবার গোপনে ওই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেন। এই যোগাযোগের মধ্যে গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে করা দুটি ফোন কলও রয়েছে।
সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাতজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে রয়টার্স।
চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) প্রথম জানায় কুশনার ট্রাম্পের বিতর্কিত নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সঙ্গে ক্রেমলিনের যোগাযোগের সূত্র হতে পারেন। এই খবরের স্বপক্ষে তাঁরা দেশটির দুইজন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার বরাত দেন।
দুটি সূত্র জানায়, গত বছর দেশটির সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করার সময় জেরার্ড কুশনারের ওপর এফবিআই নজর রাখতে শুরু করে।
রয়টার্সকে দুই আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা জানান, যখন এফবিআই ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ খুঁজতে শুরু করে তখন কুশনার সন্দেহের তালিকায় ছিলেন না। কিন্তু ওই দুই ফোন কলের পর পরিস্থিতি বদলে যায়।
তদন্তে নেমে এফবিআই জানতে পারে, ট্রাম্পের খুব কাছের লোক হিসেবে পরিচিত কুশনার যুক্তরাষ্ট্রে রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের যথাযথ অনুমতি ছাড়াই যোগাযোগ করেন।
আর এ কাজের ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জেরাড কুশনারকে নজরদারিতে রাখে এফবিআই। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা।
তবে এবারও কুশনারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী হস্তক্ষেপে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ আনেনি এফবিআই; বরং ওই অপরাধ-সংশ্লিষ্ট তথ্য কুশনারের কাছে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিরা।
তবে বিষয়টি নিয়ে একেবারেই ঠান্ডা মেজাজে রয়েছেন কুশনারের আইনজীবী জেমি গোরেলিক। তিনি জানিয়েছেন, তদন্তের বিষয়ে এফবিআইকে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন তাঁর মক্কেল।
তবে বিষয়টি নিয়ে বেশ গরম শ্বশুর ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আমেরিকার ইতিহাসে একজন রাজনীতিবিদকে এভাবে হেনস্তা করার ঘটনা আগে ঘটেনি।
সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছর নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সার্গেই কিসলাক ও এক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কুশনার। ওই বৈঠকে রাশিয়ার সঙ্গে কী আলোচনা করেছিলেন ট্রাম্প-জামাতা, সেটাই অনুসন্ধান করছে তদন্তকারীরা।
২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের আগমুহূর্তে হিলারি ও তাঁর দলের কয়েক নেতার ই-মেইল হ্যাক করা হয়। এ ঘটনা নির্বাচনে বেশ প্রভাব ফেলে।
ট্রাম্পকে জয়ী করতে নির্বাচনের আগে মাঠে নেমেছিল রাশিয়া, এমন আভিযোগ আনা হয় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে। তবে এ অভিযোগকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। ঘটনাটি স্বীকার করে ক্রেমলিনও।