রাষ্ট্রপতি পদে রজনীকান্ত, মোদির নতুন চমক?
উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভারতে তাঁকে এক নামে সবাই চেনে। ‘থালাইভা’। মানে নেতা। ভারতীয় চলচ্চিত্রের থালাইভা রজনীকান্ত এখন দেশটির রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন! ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপতি হিসেবে রজনীকান্তকেই পছন্দ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হতে পারে এটা মোদির নতুন চমক। তবে এর পেছনে আছে মোদির চতুর রাজনীতি। দক্ষিণ ভারতে বিজেপির অবস্থান বছরের পর বছর ধরে দুর্বল। সেখানে শক্ত ঘাঁটি করতে চান মোদি। আর সে ক্ষেত্রে রজনীকান্তই হবেন তাঁর তুরুপের তাস।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যদি রজনীকান্তকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়, তবে জয় হয়ে যাবে সুনিশ্চিত। চলতি বছরই শেষ হচ্ছে প্রণব মুখার্জির মেয়াদ। ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন কংগ্রেসের ওই বর্ষীয়ান বাঙালি নেতা।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি চমক দিতে পছন্দ করেন। আর তাঁর এবারের চমক হবে রাষ্ট্রপতি পদ নিয়ে। আর মোদির পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছেন দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান অভিনেতা রজনীকান্ত!
ওই পদের দাবিদার ছিলেন বিজেপি নেতা লাল কৃষ্ণ আদবানি ও মুরলি মনোহর যোশি। তবে বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত মামলায় আটকে গেছেন উভয়েই। এদের কেউই এখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোদির পছন্দের তালিকায় বলিউডের শীর্ষ অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের নামও ছিল। তবে জানা যায়, অমিতাভ নিজেই এ ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে পানামা পেপার্সে অমিতাভের নাম চলে আসায় বিষয়টি সহজেই নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু করেন রজনীকান্ত। এখন পর্যন্ত দেড়শোরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত বেশির ভাগ ছবিই তামিল। তবে তিনি হিন্দি, তেলেগু, কানাড়া, মালয়ালাম ও বাংলা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রে অসম্ভব জনপ্রিয় ওই তারকা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ‘শিবাজি’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ২৬০ মিলিয়ন রুপি সম্মানী নেন। ২০১৬ সালে ভারত সরকারের পুরস্কার পদ্মবিভূষণ ও ২০০০ সালে পদ্মভূষণ লাভ করেন।
মোদির চমক নাকি অন্যকিছু!
উত্তর ভারতে বিজেপির প্রভাব অনেক। সে তুলনায় দক্ষিণ ভারতে বিজেপির অর্জন প্রায় শূন্য। দক্ষিণের প্রদেশগুলোতে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রাধান্য অনেক বেশি। বিশেষ করে তামিলনাড়ুর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে দ্রাবিঢ় মুনেত্রা কাজাঘাম (ডিএমকে) ও অল ইন্ডিয়া আন্না মুনেত্রা কাজাঘাম (আন্না ডিএমকে)। ভারত স্বাধীন হওয়ার দুই দশক পরেই প্রদেশটি থেকে ক্ষমতা হারায় কংগ্রেস। এখন পর্যন্ত আঞ্চলিক দলগুলোর সহায়ক হয়েই থাকতে হচ্ছে বিজেপি ও কংগ্রেসকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি এর পরিবর্তন চান। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তিনি ও তাঁর দল দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে সম্পর্ক বাড়িয়েছেন ব্যাপকভাবে। দলিতদের অধিকার নিয়ে সেখানে আন্দোলন করছে বিজেপি। আসন না পেলেও বেশ ভালো ভোট পেয়েছে বিজেপি। মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন থেকেই জয়ললিতা আর তাঁর দল আন্না ডিএমকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন মোদি।
দক্ষিণ ভারতে রজনীকান্তের ভক্ত অসংখ্য। সম্প্রতি ‘কাবালি’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়ার দিন তামিলনাড়ুতে সরকারি ছুটি দেওয়া হয়। মোদি এ আবেগটাই চান। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, রজনীকান্তকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিলেই দক্ষিণ ভারতের চোখে জনপ্রিয় হয়ে যাবেন মোদি। আর রাষ্ট্রপতির চেয়ারে রজনীকান্তকে বসাতে পারলে মোদি আর আগের মতো অচেনা থাকবেন না চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর মানুষদের কাছে।
রজনীকান্তের রাজনীতি!
রজনীকান্ত রাজনীতিতে এখনো হাঁকডাক দিয়ে প্রবেশ করেননি। তবে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে নরসিমহা রাওয়ের কংগ্রেসকে সমর্থন দেন তিনি। পরের বছর কংগ্রেস আন্না ডিএমকের সঙ্গে জোট করলে সমর্থন প্রত্যাহার করেন রজনীকান্ত। তিনি ডিএমকের পক্ষ নেন। এরও অনেক পর ২০০৪ সালে রজনীকান্ত জানান, তিনি ভোট দেবেন বিজেপিকে।
এদিকে ২০০৮ সালে রজনীকান্তের একদল ভক্ত একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। ওই দলের নাম দেওয়া হয় ‘দেশিয়া দ্রাভাদার মাক্কাল মুনেত্রা কাজাঘাম।’ ওই দলের প্রধান করা হয় রজনীকান্তকে। দলের প্রতীক ও পতাকাও করা হয়। তবে রজনীকান্ত গণমাধ্যমকে এক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, ওই দলের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই!