বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকা তিনজনের মৃত্যুদণ্ড
দুই পাকিস্তানি এবং এক ভারতীয়সহ তিন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ আদালত ওই তিন ব্যক্তির ফাঁসির আদেশ দেন।
আজ শনিবার বনগাঁ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ বিনয় কুমার পাঠক এই সাজা ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন মুহম্মদ ইউনুস, আবদুল্লাহ, মুজাফফর আহমেদ রাজেন। ইউনুস ও আবদুল্লাহ পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা। অন্যদিকে মুজাফফর ভারতের নাগরিক।
জানা যায়, ২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন মুহম্মদ ইউনুস, আবদুল্লাহ, মুজাফফর আহমেদ রাজেন ও শেখ সামির। ওই সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন ওই চারজন। আটকদের মধ্যে পরে শেখ সামির পালিয়ে যান।
২০০৭ সালে ধরা পড়ার পর ওই চার ব্যক্তির কাছ থেকে ভারতীয় জাল নোট, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পারে, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন ওই চার ব্যক্তি। তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাছাউনি উড়িয়ে দেওয়া। এ ছাড়া ভারতীয় সেনাসদস্য যাতায়াতকারী ট্রেনে বিস্ফোরণ ঘটানোরও ছক ছিল তাঁদের। আটক চার ব্যক্তির কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া সেতুসহ ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেতুর ছবি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া তাদের কাছে থেকে পাওয়া যায় ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মানচিত্রও।
পুলিশ জানতে পারে, পাকিস্তানের এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় ইউনুস ও আবদুল্লাহর। পাকিস্তানের সেই জঙ্গি নেতাই তাদের লস্কর-ই-তৈয়বার জঙ্গি হিসেবে প্রশিক্ষণ দেন। বোমা তৈরি, গ্রেনেড ছোড়া এবং অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও নেন তাঁরা। এমনকি প্রশিক্ষণ নেন আত্মঘাতী বোমা হামলারও। পাকিস্তানের নাগরিক ইউনুস ও আবদুল্লাহর সঙ্গে পরে যোগাযোগ হয় ভারতের নাগরিক মুজাফফর ও সামিরের। মুজাফফর ও সামির ভারতে লস্কর-ই-তৈয়বার হয়ে কাজ করতেন। পুলিশ জানায়, ওই চার ব্যক্তি ভারতের মুম্বাই বিস্ফোরণ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ রেল বিস্ফোরণের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। পরে তাঁরা বাংলাদেশে গিয়ে গা ঢাকা দেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের থানায় ওই চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগও আছে।
২০০৭ সালে বনগাঁ থেকে ধরা পড়ার পর এই চার আসামিকে মুম্বাই নিয়ে যাওয়ার পথে ছত্রিশগড় থেকে পালিয়ে যায় শেখ সামির। যেহেতু শেখ সামির পলাতক, তাই এদিন বনগাঁ আদালত বাকি তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
মামলার সরকারি আইনজীবী সমীর কুমার দাস বলেন, ‘আসামিরা আদালতের কাছে গোপন জবানবন্দিতে ভারতে ঢুকে নাশকতার কথা স্বীকার করেছে। আসামিদের বেঙ্গালুরুতে নার্ভ প্যারালাইসিস পরীক্ষা করা হয়।’ সমীর দাস জানান, গত বৃহস্পতিবার বনগাঁ আদালত এই তিন জঙ্গিকে দোষী সাব্যস্ত করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১, ১২১ এ, ১২২, ১২০ বি-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়। দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির মূলত ১২১ ধারা অনুসারে এদিন ওই তিন আসামির ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়।