পূজার ছুটিতে
কামরূপ কামাখ্যা
পূজায় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরতে কার না ভালো লাগে। আর পূজার সময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা যদি হয় দেশের বাইরে তাহলে তো আনন্দের সীমাই থাকে না। তো চলুন না এবার দেশের বাইরে পূজায় ঘুরে আসি।
ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পর্বতে অবস্থিত হিন্দু দেবী কামাখ্যার একটি মন্দির। এটি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম। এই মন্দির চত্বরে ১০ মহাবিদ্যার মন্দিরও আছে। এই মন্দিরগুলোতে ভুবনেশ্বরী, বগলামুখী, ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরা সুন্দরী, তারা, কালী, ভৈরবী, ধূমাবতী, মাতঙ্গী ও কমলাদেবীর মন্দিরও রয়েছে। এর মধ্যে ত্রিপুরাসুন্দরী, মাতঙ্গী ও কমলা প্রধান মন্দিরে পূজিত হন। হিন্দুদের, বিশেষত তন্ত্রসাধকদের কাছে এই মন্দির একটি পবিত্র তীর্থ। কথিত আছে জাদু বিদ্যার তীর্থ স্থান হলো কামরূপ কামাখ্যা।
যা দেখবেন
হাজার বছরের রহস্যময় স্থান কামরূপ কামাখ্যা। এখনো জাদুবিদ্যা সাধনার জন্য বেছে নেওয়া হয় কামাখ্যা মন্দিরকেই। কামরূপ কামাখ্যার আশপাশের অরণ্য আর নির্জন পথে নাকি ঘুরে বেড়ায় ভালো-মন্দ আত্মারা। ছোট্ট দুটি শব্দ। ‘কামরূপ কামাখ্যা’। আর এই দুটি শব্দের মধ্যেই লুকানো তাবৎ রহস্য, রোমাঞ্চ আর গল্পগাথা। কামাখ্যা মন্দিরে চারটি কক্ষ আছে: গর্ভগৃহ ও তিনটি মণ্ডপ(যেগুলির স্থানীয় নাম চলন্ত, পঞ্চরত্ন ও নাটমন্দির)। গর্ভগৃহটি পঞ্চরথ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। অন্যগুলোর স্থাপত্য তেজপুরের সূর্যমন্দিরের সমতুল্য। এগুলোতে খাজুরাহো বা অন্যান্য মধ্যভারতীয় মন্দিরের আদলে নির্মিত খোদাইচিত্র দেখা যায়।
মন্দিরে প্রবেশের পর দেখা পাবেন সৌভাগ্যকুণ্ডের। সেখানে কুণ্ডের জ্বলে সবাই সিক্ত হয় অন্য দিকে ডান পাশে দেখা পাবেন সনাতন ধর্ম মতে, সিদ্ধিদাদ্রী গণেশের প্রতিমা। আশপাশের আগরবাতির গন্ধে মন ভরে উঠবে আপনার। এরপর প্রবেশ করতে হবে মূল গর্ভ গৃহে। তবে এখানে বেশ বড় লাইন পেরিয়ে প্রবেশ করতে হবে। মন্দির অভ্যন্তরে ঢোকামাত্র এক অদ্ভুত পরিবেশের মধ্যে গিয়ে পড়তে হবে। ধূপের গন্ধ, ফুলের সৌরভ, নিভে যাওয়া মোমবাতি এবং প্রদীপের গন্ধ, ভক্তদের দেবী বন্দনা, পাণ্ডাদের মন্ত্রপাঠ, দলবিচ্ছিন্ন মানুষদের ডাকাডাকি, চেঁচামেচি- সব মিলিয়ে মনে হয় এ যেন সম্পূর্ণ এক অন্য জগৎ।
মূল গর্ভ গৃহ অন্ধকার শুধু মাত্র প্রদীপের আলোয় আলোকিত খুব কম সময়ই পাওয়া যায় অবস্থানের জন্য। প্রাকৃতিক এক রহস্যময় গুহাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এই কামরূপ কামাখ্যা মন্দির। ওই যে দেখুন, সিংহাসনে আসীন অষ্টধাতুর কামাখ্যা দেবীর বিগ্রহ। কিছুটা দূর এগিয়ে গেলে পাহাড়ের ওপর থেকে ব্রহ্মপুত্রের প্রবহমান পথ, নদী-তীরবর্তী বিভিন্ন ঘাট এবং গৌহাটি শহরের অনেকটা অংশ পরিষ্কার দেখা যায়।
পথের ঠিকানা
ঢাকা থেকে গৌহাটি বিভিন্নভাবে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে কলকাতা সেখান থেকে ট্রেন অথবা প্লেনে করে যেতে পারবেন গৌহাটিতে তবে সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে ঢাকা থেকে সিলেটের পর শিলং হয়ে গৌহাটি। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে ডাউকি বডার উল্লেখ করে দিতে হবে।