শিক্ষার শুরুতেই তথ্যপ্রযুক্তি চর্চা প্রয়োজন
প্রাথমিক শিক্ষার শুরু থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি চর্চা শুরু করা প্রয়োজন। প্রথম থেকেই যদি শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দেওয়া যায়, তাহলে আমাদের দেশেই তৈরি হবে মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস অথবা বিল গেটসের মতো প্রযুক্তিবিদ।
আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে বিজটেক বিটুবি সম্মেলনের সমাপনী দিনে এমন কথা বলেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার। দুদিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয় গতকাল শনিবার।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির অনুপস্থিতিই আমাদের উন্নতির পথ অবরুদ্ধ করছে। প্রাথমিক শিক্ষার গলদই শিক্ষাব্যবস্থার মূল সমস্যা।’ তিনি আরো জানান, সারা পৃথিবীর দেশগুলোতে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানো হলেও বাংলাদেশে তার চিত্র ঠিক উল্টো।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘জাতি হিসেবে সারা পৃথিবীতে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।’
আলোচনায় বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘সরকার উচ্চমূল্যে বিদেশি সফটওয়্যার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান থেকে সফটওয়্যার কিনতে আগ্রহী হলেও দেশি সফটওয়্যার কেনার ক্ষেত্রে সরকারের স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেশীয় সফটওয়্যার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তসংযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। আমাদের সাধারণ মানুষদেরও উচিত দেশি সফটওয়্যার টাকা দিয়ে কিনে সফটওয়্যার নির্মাতাদের উৎসাহিত করা।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এলআইসিটির দলপ্রধান সামি আহমেদ, ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জের পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বনমালী ভৌমিক।
বিজটেকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরে তৈরি পোশাক খাতের ওপর আরেকটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তৈরি পোশাক খাতের ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বেসিসের সহসভাপতি এম রাশিদুল হাসান।
বেসিসের সাবেক সভাপতি ও সিএসএল সফটওয়্যার রিসোর্সেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম রাউলির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সুশান্ত কুমার সাহা, বেসিসের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম ও বিকেএমইএর পরিচালক সেলিম মাহমুদ।
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। এই খাতে রফতানিতে বিশ্বে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে পোশাক খাত থেকেই আয় হয়েছে ২৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ২০২১ সাল নাগাদ ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। আর সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর তৈরি পোশাক খাত! তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাতে ৮১ শতাংশ ভ্যালু অ্যাড করা সম্ভব।
বক্তারা আরো বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের বিজনেস ট্রানজেকশন প্রসেসিং, পারফরমেন্স মূল্যায়ন, যোগাযোগসহ ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা করতে পারে।
কিন্তু আমাদের দেশের এই খাতে এখনো পর্যন্ত সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ততটা চোখে পড়ে না। অনেক গার্মেন্টস মালিক এ বিষয়ে না জানার কারণে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে চান না।
আর যাঁরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল দিকগুলো বোঝেন, তাঁরা অনেকেই উচ্চ দামে বিদেশ থেকে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এসব সেবা নিয়ে খরচ কয়েক ভাগ কমে যেত। বিক্রয় পরবর্তী সেবার ক্ষেত্রে ভালো সেবা পাওয়া যেত।
বক্তারা আরো বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির বিকল্প নেই। আর দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার চাহিদা পূরণের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যার বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো আন্তর্জাতিক মানের। দাম ও সেবার ক্ষেত্রেও সেগুলোতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি সহায়ক।