অলিম্পিক থেকে ‘হারিয়ে’ যাওয়া পাঁচ খেলা
অলিম্পিক শুধু একটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতাই নয়, ক্রীড়াবিদদের বিশাল সম্মিলনও। চার বছর ধরে এই মহাযজ্ঞের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে ক্রীড়াপ্রেমীরা। আধুনিক অলিম্পিক এবার পূর্ণ করতে যাচ্ছে ১২০ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে অজস্র খেলার সাক্ষী হয়েছে অলিম্পিক। বেশ কিছু খেলা আবার হারিয়েও গেছে। তেমনই পাঁচটি খেলা নিয়ে এই আয়োজন।
ক্রিকেট
গলফ আর রাগবি দীর্ঘদিন পর ফিরতে যাচ্ছে অলিম্পিকে। তবে ক্রিকেট এবারো ‘ব্রাত্য’ বিশ্বের সেরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। পাক-ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাকে একবারই দেখা গিয়েছিল অলিম্পিকে। ১৯০০ সালে প্যারিসে চারটি ক্রিকেট দলের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম নাম প্রত্যাহার করে নিলে দল নেমে আসে দুটিতে। স্বর্ণপদকের লড়াইয়ে স্বাগতিক ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ছিল যুক্তরাজ্য। ফ্রান্সের দল গড়া হয়েছিল প্যারিস প্রবাসী ব্রিটিশদের নিয়ে। একমাত্র ম্যাচে ফ্রান্সকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতে নিয়েছিল যুক্তরাজ্য।
জীবন্ত কবুতর শুটিং
১৯০০ সালে প্যারিস অলিম্পিকে একবারই দেখা গিয়েছিল এই খেলা। যে খেলায় মরতে হয়েছিল প্রায় ৩০০ কবুতরকে। প্রতি রাউন্ডে ছয়টি করে জীবন্ত কবুতর ছেড়ে দেওয়া হতো একজন প্রতিযোগীর সামনে। শটগান দিয়ে দুটি কবুতর মারতে না পারলেই বাদ পড়ে যেতেন প্রতিযোগী। আজকের যুগে এমন রক্তাক্ত, বীভৎস খেলার কথা উঠলে জীবপ্রেমীরা তেড়ে আসবেন। কিন্তু ওই অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল সেটা নাকি ‘খুব অভিজাত’ খেলা! ২১টি কবুতর মেরে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন বেলজিয়ামের লিওন ডি লুন্ডেন। একটি কম মেরে রুপা পেয়েছিলেন ফ্রান্সের মরিস ফুরে। ব্রোঞ্জ পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ডোনাল্ড ম্যাকিন্টশ মেরেছিলেন ১৮টি কবুতর। মজার ব্যাপার হলো, অভিজাত খেলা হিসেবে বিবেচনা করলেও ফলাফলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি কবুতর শুটিংকে। অলিম্পিকেও আর কখনো ফিরতে পারেনি বিতর্কিত খেলাটি।
পিস্তল ডুয়েলিং
ডুয়েল মানেই রিভলভার বা পিস্তল নিয়ে দুজনের মুখোমুখি লড়াই। ১৯১২ সালে স্টকহোম অলিম্পিকে অবশ্য পিস্তল ডুয়েলিং ইভেন্টে কাউকে জীবন দিতে হয়নি। এই ইভেন্টে কোট-প্যান্ট পরা একটি ডামির গলা লক্ষ্য করে ৩০ মিটার দূর থেকে গুলি করতে হতো প্রতিযোগীদের। স্বাগতিক সুইডেনের পল পালেন আর হুবনার ফন হলস্টকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাল লেন। পিস্তল ডুয়েলিং রূপান্তরিত হয়ে বর্তমানে পুরুষদের ২৫ মিটার র্যাপিড-ফায়ার পিস্তল ইভেন্ট হয়েছে, যা দেখা যাবে রিও অলিম্পিকেও।
ক্লাব সুইঙ্গিং
বর্তমানের রিদমিক জিমন্যাস্টিকস এসেছে ক্লাব সুইঙ্গিং থেকে। ১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস আর ১৯৩২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ছিল এই ইভেন্ট। লস অ্যাঞ্জেলসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ রথ। মার্কিন মুল্লুক তখন আর্থিক মন্দায় জর্জরিত। দেশজুড়ে লাখ লাখ মানুষ বেকার। সেই বেকারদের মধ্যে ছিলেন জর্জ রথও।
টাগ অব ওয়ার বা দড়ি টানাটানি
স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা কোনো শৌখিন ক্রীড়ানুষ্ঠানের জনপ্রিয় খেলা দড়ি টানাটানি। ১৯০০ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত অলিম্পিকে ছিল খেলাটি। ১৯০৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী যুক্তরাজ্য দলের সব সদস্য ছিল পুলিশ। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনিদের দাবি, ভারী জুতা পরে অংশ নেওয়ার জন্যই সাফল্য পেয়েছিল ব্রিটিশরা। যদিও সেই অভিযোগ ধোপে টেকেনি।