গ্রুপ পর্বের যত হিসাব নিকাশ
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গ্রুপ পর্ব। ৪২ ম্যাচের গ্রুপ পর্ব শেষে প্লে অফে লড়াইয়ে উঠেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ঢাকা ডায়নামাইটস, খুলনা টাইটানস ও রংপুর রাইডার্স। তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের সঙ্গে পেরে উঠতে না পারায় বিদায় নিয়েছে সিলেট সিক্সার্স, রাজশাহী কিংস ও চিটাগং ভাইকিংস। আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে প্লে অফের লড়াই। গ্রুপ পর্ব শেষে দলগুলোর অবস্থাসহ বিস্তারিত পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া যাক :
দলগুলোর অবস্থা : এবারই প্রথম বিপিএলের আসর বসে সিলেটে। সেখানে মোট আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আটটি ম্যাচের তিনটিতেই জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল সিলেট সিক্সার্স। সিলেট পর্বে রাজশাহী কিংস বাদে সবকটি দলই জয় পায়। তবে ঢাকা পর্বে এসে দলগুলোর অবস্থা বদলেছে। টানা কয়েকটি ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ঢাকায় ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে জয় পায় তামিম ইকবালের দল।
চট্টগ্রাম পর্বে এসে আরো জমে ওঠে বিপিএল। রংপুরকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের সিংহাসন দখল করে মাহমুদউল্লাহর খুলনা টাইটানস। শীর্ষস্থান দখল করার সুযোগ ছিল তামিমদের সামনে। তবে রাজশাহীর বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় তেমনটা হয়নি। তবে সুযোগ হাতছাড়া করেনি ঢাকা। একদিনের ব্যবধানে স্বাগতিক চিটাগংকে হারিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেন সাকিবরা। তবে সেটাও ধরে রাখতে পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আবার রাজত্ব ফিরে পান মাহমুদউল্লাহ। এই পর্বে শেষ পর্যন্ত শীর্ষস্থান ধরে রাখে খুলনা।
ঢাকায় ফিরতি পর্বে আবার পয়েন্ট টেবিল নিজেদের দখলে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। গ্রুপ পর্ব শেষেও সেটা তামিমদের দখলেই থাকল। ১২ ম্যাচে নয়টিতেই জিতেছে কুমিল্লা। শেষ পর্বে ঢাকা ও খুলনার মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান নির্ধারণ নিয়ে বেশ নাটক চলে তবে শেষমেশ খুলনাকে হটিয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে সাকিব আল হাসানের ঢাকা। খুলনা তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকে রংপুর রাইডার্স। সিলেট সিক্সার্স, চিটাগং কিংস ও রাজশাহী কিংসের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় গ্রুপ পর্ব শেষ হওয়ার দুদিন আগেই।
সবচেয়ে বেশি রান : সিলেট পর্বে সবচেয়ে বেশি রান ছিল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গার। তবে ঢাকায় ইমরুল কায়েস, রবি বোপারা, গেইলরা আলো ছড়ান। এই পর্বে শীর্ষ সংগ্রাহক হন এভিন লুইস। তবে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখতে পারেননি তিনি। টানা কয়েক ম্যাচে রান করে লুইসকে ছাড়িয়ে যান রংপুর রাইডার্সের রবি বোপারা। গ্রুপ পর্ব শেষে বোপারার রান ৩৬৫। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ৩৩৪ রান করা এভিন লুইস। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানটি লুক রঞ্চি (৩২১) ও আন্দ্রে ফ্লেচারের (৩১৭)। শীর্ষ পাঁচে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার হলেন মোহাম্মদ মিঠুন (২৯৯)।
সবচেয়ে বেশি ছক্কা : এবারের টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ২৩টি ছক্কা মেরেছেন এভিন লুইস। ২১টি ছক্কা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে লুক রঞ্চি। ১৮টি ছয় মেরেছেন আরেক ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান কার্লোস ব্রের্থওয়েট। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানটিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের। পোলার্ড মেরেছে ১৬টি ছয় আর গেইল হাঁকিয়েছেন ১৫টি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ১১টি ছক্কা মেরে তালিকার দশম স্থানে রয়েছেন এনামুল হক বিজয়।
সবচেয়ে বেশি উইকেট : এবারের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশি বোলাররা আলো ছড়িয়েছেন। টুর্নামেন্টের শীর্ষ ছয় উইকেটশিকারির সবাই বাংলাদেশি। অনেকদিন ধরেই সেরা উইকেটশিকারির তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন আবু জায়েদ রাহি। তবে শেষ কয়েকটি ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে এসেছেন সাকিব আল হাসান। ১৯ উইকেট নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন সাকিব। রাহির উইকেটসংখ্যা ১৮টি। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (১৫), আবু হায়দার রনি (১৪), তাসকিন আহমেদ (১৪) ও মাশরাফি বিন মুর্তজা নিয়েছেন ১৩ উইকেট। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন শহীদ আফ্রিদি ও হাসান আলী। দুজনেই নিয়েছেন ১২টি করে উইকেট।
সেরা বোলিং ফিগার : টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি বোলাররা দারুণ খেলেছেন। টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং বিশ্লেষণের রেকর্ডটি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দখলে। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন তিনি। দ্বিতীয় নামটি হাসান আলীর। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ২০ রানে পাঁচ উইকেট নেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এই বোলার। এ ছাড়া শফিউল হক ও নাসির হোসেনও এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট করে নিয়েছেন।
সেরা জুটি : গ্রুপ পর্বে মোট নয়টি ম্যাচে শতাধিক রানের জুটি হয়েছে। যার মধ্যে ছয়টিই করেছেন ঢাকা ও সিলেটের ব্যাটসম্যানরা। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১২৯ রানের জুটি জো ডেনলি ও সুনীল নারাইনের। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে ১২৯ রান যোগ করেন তাঁরা। এ ছাড়া প্রথম উইকেট জুটিতে আন্দ্রে ফ্লেচার ও উপুল থারাঙ্গা করেন ১২৫ রান। উদ্বোধনী জুটিতে চারবার শতোর্ধ্ব রান হয়েছে।
সবচেয়ে বড় জয় : এবারের বিপিএলে সবচেয়ে বড় রানে জয়ের দুটি রেকর্ডের মালিকই ঢাকা ডায়নামাইটস। চিটাগং কিংসকে ৯৯ রানে হারায় সাকিব আল হাসানের দল। এছাড়া দ্বিতীয় পর্বে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ৬৮ রানের জয়টি টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বড় রানের জয়।
এবারের আসরে সাত্র একবারই ১০ উইকেটে জয়ের ঘটনা ঘটেছে। সিলেট পর্বে চিটাগং ভাইকিংসকে ১০ উইকেটে হারায় সিলেট সিক্সার্স। নয় উইকেটে জয়ের ঘটনা রয়েছে তিনটি। ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৯ উইকেটে হারায় সিলেট। এ ছাড়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স চিটাগং কিংস ও খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে।