বাংলাদেশকে দিয়েই ক্রিকেটে নতুন যুগের শুরু
১৮৭৭ সালে প্রথম ম্যাচের পর বিভিন্ন সময় প্রয়োজনের খাতিরে ক্রিকেটের নিয়মকানুনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিছু স্থায়ীভাবে রয়ে গেছে, কিছু আবার বাদ পড়েছে। এবার একগাদা নিয়ম পরিবর্তন করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। ১৪০ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে একসঙ্গে এত বেশি নিয়ম পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচ দিয়েই নতুন নিয়মগুলোর যাত্রা শুরু হচ্ছে।
ক্রিকেটের যেসব নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাটের আকার পরিবর্তন। এখন থেকে আর ইচ্ছামতো আকার-আকৃতির ব্যাট ব্যবহার করতে পারবেন না কোনো ব্যাটসম্যান। এ ছাড়া অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করলে কোনো ক্রিকেটারকে মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আম্পায়ারদের। এ ছাড়া মানকড় আউট, হ্যান্ডেল দ্য বল, ইচ্ছাকৃতভাবে নো বল, অতিরিক্ত ফিল্ডার, স্লেজিংয়ের ক্ষেত্রে শাস্তিসহ বেশ কিছু নিয়ম পরিবর্তন করেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি।
২০১৫ সালে ক্রিকেটের বেশ কিছু নিয়ম পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু করে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব। গত বছর আইসিসি এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করে। অবশেষে ২৬ সেপ্টেম্বর বেশ কিছু আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে আইসিসি নতুন নিয়মগুলো পাস করে।
ক্রিকেটের যেসব নিয়ম বদলেছে :
১. নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট ব্যাটের আকার প্রস্থে ১০৮, গভীরতায় ৬৭ ও প্রান্তসীমায় ৪০ মিলিমিটারের বেশি হবে না। বর্তমানে ওয়ার্নারের ব্যাটের আকার প্রস্তাবিত আকারের চেয়ে অনেক বেশি। গত ডিসেম্বরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৮৫ মি.মি. গভীরতার ব্যাট দিয়ে খেলেন ওয়ার্নার।
২. নতুন নিয়মমতে, মাঠে কোনো খেলোয়াড় অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করলে তাঁকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে আম্পায়ারের হাতে। তবে এখানে কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। বেশি আবেদন করলে অথবা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ না করলে আম্পায়ার প্রাথমিকভাবে সতর্ক করবেন সেই দলকে। এ ক্ষেত্রে ৫ রানের মাশুল গুনতে হবে দায়ীকে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো খেলোয়াড়ের দিকে বল ছুড়ে মারে, সে ক্ষেত্রেও ৫ রানের জরিমানা গুনতে হবে, যা অপর দলের রানের সঙ্গে যোগ হবে। কোনো খেলোয়াড় বা আম্পায়ারকে হুমকি-ধমকি বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটলে রানসহ ওভারকর্তন করতে পারবেন আম্পায়াররা। এমনকি সেই খেলোয়াড়কে আউট ঘোষণা করে মাঠ থেকে বেরও করে দিতে পারবেন আম্পায়ার।
৩. উইকেটের ওপরে থাকা বেল-সংক্রান্ত একটা পরিবর্তনও এসেছে ক্রিকেটে। এখন পর্যন্ত উইকেটের ওপর যে বেল দুটি বসানো হয়, সেগুলো বানানো হয় কাঠ দিয়ে। কিন্তু উইকেটরক্ষকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সেই বেলটা নরম প্লাস্টিক দিয়ে বানানো হবে। ২০১২ সালে এই বেলের আঘাতেই ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক মার্ক বাউচারের।
৪. ‘অবস্ট্রাকলিং দ্য ফিল্ড’ আর ‘হ্যান্ডল দ্য বল’ নামে যে দুটি আলাদা আউটের বিধিমালা বর্তমানে আছে, সে ক্ষেত্রেও আসছে পরিবর্তন। নতুন নিয়মে আলাদা নাম থাকবে না এ দুই ধরনের আউটের।
৫. বাউন্সিং ব্যাট রানআউটের ক্ষেত্রে নিয়মের পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে রানআউট থেকে বাঁচার সময় ডাইভ মারলে ব্যাট মাটিতে থাকার নিয়ম ছিল। কোনো অবস্থায় ব্যাট উঠে গেলে আউট হতেন ব্যাটসম্যান। এখন থেকে ডাইভ দেওয়ার সময় ব্যাট যদি মাটিতে থাকে আর ব্যাটসম্যান যদি সুরক্ষিতভাবে ক্রিজে পৌঁছে যান, তাহলে তিনি আউট হবেন না। এ বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরে এ আইনেই টাইগার উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের থ্রোয়ে আউট হয়েছিলেন কিউই ব্যাটসম্যান নেইল ওয়াগনার।
৬. ক্রিকেটের নতুন আইনমতে, কোনো ক্যাচ ফিল্ডারের হেলমেটে লাগার পর ধরলেও সেটা আউট হবে। গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে এ আইনে বেঁচে গিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান মইন আলি। সেবার সাকিবের বলটা মইনের ব্যাটে লেগে মুমিনুলের হাতে পড়েছিল। তবে ঠিকমতো ধরতে পারেননি টাইগার ফিল্ডার। বল হাত থেকে ফসকে তাঁর হেলমেটের গ্রিলে ধাক্কা খায়। তবে আম্পায়ার নটআউট ঘোষণা করেন মইনকে। নতুন নিয়মে, এ ধরনের ঘটনায় ব্যাটসম্যানকে আউট ঘোষণা করবেন আম্পায়ার।
৭. এখন থেকে দুবার কোনো বোলারের বল পিচে বাউন্স খেলে সেটিকে নো বল ডাকবেন আম্পায়ার। আগে এটি দুবারের বেশি বাউন্স খাওয়ার নিয়ম ছিল।
৮. নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আউট হয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়া ব্যাটসম্যানকে পরবর্তী বল হওয়ার আগে ফেরত আনতে পারবেন আম্পায়ার। এমনকি প্রতিপক্ষ অধিনায়ক যদি আবেদন ফিরিয়ে নেন, সে ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। আগের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাটসম্যান মাঠের বাইরে চলে গেলে আউট না হলেও তাঁকে আর ফেরানো যেত না।
৯. ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাটসম্যানের উদ্দেশে বল থ্রো করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
১০. কোনো বোলার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নো বল করেন, সে ক্ষেত্রে সেই ইনিংসে তিনি আর বল করতে পারবেন না।
১১. এখন থেকে চারজনের বদলে ছয়জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় দলে রাখা যাবে।
১২. কোনো ব্যাটসম্যান আউট হলে তিন মিনিটের মধ্যে পরবর্তী ব্যাটসম্যানকে মাঠে নামতে হবে। নিয়মটি আগে দুই মিনিটের ছিল।
১৩. বৃষ্টির কারণে কোনো ইনিংসের ১০ ওভারের বেশি কর্তন হলে একজন বোলারের দুই ওভারের বেশি কর্তন করা যাবে না।
১৪. টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ডিআরএসের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।