দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমের খোঁজে বাংলাদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মাটিতে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। সাকিব-তামিমদের সামনে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তানের মতো দলগুলো এসে পর্যুদস্ত হয়েছে। তবে টেস্টে বিদেশের মাটিতে বিশেষ করে সিমিং কন্ডিশনে এখনো নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি টাইগার দলটি। এর আগে দুবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে লাল-সবুজের দল। প্রোটিয়াদের দেশে চারটি টেস্ট খেলে বড় ব্যবধানে হারের মুখ দেখতে হয়েছে তাদের। তবে এবার জয়ের বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় পচেফস্ট্রুমে শুরু হবে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি।
টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর আগে বাংলাদেশের দশবার সাক্ষাৎ হয়েছে। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে দুটি টেস্ট ড্র ছাড়া বলার মতো আর কোনো সাফল্য নেই টাইগারদের। দেশটির বিপক্ষে সাতবারই ইনিংস ব্যবধানে হার মেনেছে বাংলাদেশ।
তৃতীয়বারও কি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে খালি হাতে ফিরতে হবে? জবাবটা পাওয়া যাবে প্রথম টেস্টের পরই। তবে আগেভাগে হার মানতে নারাজ টাইগাররা। প্রস্তুতি ম্যাচে রানের দেখা পাওয়া অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন আগে আমরা এখানে এসেছি। প্রস্তুতি ম্যাচেও ভালো খেলেছি। আমাদের প্রস্তুতিটা ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে আত্মবিশাসী আমরা।’
এর আগে একই কথা বলেছিলেন তাসকিন আহমেদও। তবে কোচ হাথুরুসিংহের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছেন বোলাররা। প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করতে পারেননি মুস্তাফিজ-তাসকিনরা। মুস্তাফিজ ১৩ ওভার বল করে ২৮ রানে নেন এক উইকেট। তাসকিন ছিলেন ব্যয়বহুল। ১৪ ওভারে ৭০ রানে মাত্র এক উইকেট নেন এই পেসার। এ ছাড়া শুভাশীষ ও শফিউল উইকেট পেলেও ব্যাটসম্যানদের খুব একটা বিব্রত করতে পারেননি। সাকিববিহীন স্পিন বিভাগও ছিল নিষ্প্রভ। মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল নেন একটি করে উইকেট। বলা বাহুল্য, দক্ষিণ আফ্রিকার সিমিং ও বাউন্সি উইকেটে ম্যাচ জিততে হলে বড় দায়িত্বটা নিতে হবে মুস্তাফিজ, তাসকিনদের।
টাইগার ভক্তদের আশা জোগাচ্ছেন ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশের বিপক্ষে প্রায় সবাই রানের দেখা পেয়েছেন। প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক (৬৮), মুশফিকুর রহিম (৬৩) ও সাব্বির রহমান (৫৮) দারুণ তিনটি ইনিংস খেলেছিলেন। রান পেয়েছেন সৌম্য সরকারও। দ্বিতীয় ইনিংসেও দারুণ ব্যাটিং করেন সাব্বির। এ ছাড়া হাফ সেঞ্চুরি করেন ইমরুল কায়েসও। তাই বলা যায়, প্রথম টেস্টের আগে ব্যাটিং অনুশীলনটা ভালো হয়েছে বাংলাদেশের। এদিকে প্রথম টেস্টের আগে চোট কাটিয়ে অনুশীলনে ফিরেছেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। এই বিষয়টিও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে পুরো দলকে।
এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে মানসিকভাবে কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দলের প্রধান তারকা সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই নামতে হবে মুশফিকদের। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ব্যাটসম্যানদের বাজে পরিসংখ্যানটাও ভাবাচ্ছে টাইগারদের। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এর আগে খেলা ছয় টেস্টে তামিমের রান মাত্র ১৬৬। সর্বোচ্চ মাত্র ৫৭! প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খুব একটা ব্যাট হাসে না মুশফিকেরও। ছয় টেস্টে ২৩ গড়ে মুশির রান ২৩৮। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপর টাইগার ব্যাটসম্যানদের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়।
এদিকে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রেখেছেন প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা। সিরিজ জয়ের বিষয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই তাঁর। রাবাদা জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর দলই ফেভারিট। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ক্রিকেটের বাইরে ছিলাম আমরা। তাই বিরতির পর শুরুটা ভালো করতে চাই। আমাদের দলটা দারুণ। আর আমরা জানি কীভাবে জিততে হয়।’
ডেল স্টেইন ও ফিল্যান্ডারের অভাবটা বোধ করলেও বাংলাদেশকে হারানোর বিষয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী রাবাদা। তিনি বলেন, ‘স্টেইন প্রমাণ করেছে কেন সে বিশ্বসেরা পেসার। ফিল্যান্ডারের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। তাদের অভাবটা তো বোধ হবেই। তবে দলে বেশ কিছু নতুন মুখ আছে যারা দুর্দান্ত। এটা তাদের জন্য দারুণ এক মঞ্চ। তাই সিরিজটা নিয়ে আমি দারুণ আশাবাদী।
দীর্ঘ নয় বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছে বাংলাদেশ। টাইগার সমর্থকদের একটাই চাওয়া, এবার যেন খালি হাতে না ফেরেন তামিম-মুশফিকরা।