এই বিশ্রামটা আসলেই দরকার ছিল : সাকিব
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সুখস্মতিটা এখনো টাইগার সমর্থকদের মনে তরতাজা। এরই মধ্যে কয়েকদিন পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবে বাংলাদেশ। তবে এই সফরে দলের সঙ্গে থাকছেন না বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। টানা খেলার ধকল থেকে মুক্তি পেতে বিসিবি বরাবর ছুটির আবেদন করেন তিনি। সাকিবের আবেদন মঞ্জুর করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সাকিবের ছুটির আবেদনের খবরটা প্রচার হতেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সমর্থকদের মধ্যে। অনেকে সাকিবের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে। অনেকে আবার বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখেছেন। বাধ্য হয়ে ভক্তদের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন সাকিব। এরপর করেছেন সংবাদ সম্মেলন। সেখানে সাকিব জানিয়েছেন, ক্যারিয়ার আরো চার-পাঁচ বছর দীর্ঘায়িত করতেই এই ছুটিটা দরকার ছিল। ছুটি শেষে আরো চনমনে হয়ে মাঠে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, ‘দেশকে দীর্ঘ সময় সার্ভিস দেওয়ার জন্যই ছুটিটা নেওয়া। ক্যারিয়ারটা আরো দীর্ঘায়িত করতে চাই আমি। এই কারণেই ৬ মাসের ছুটি চেয়েছিলাম। ৬টা মাস ছুটি পেলে আরো পাঁচ বছর বেশি খেলা যাবে।’
ছুটি প্রসঙ্গে সাকিব আরো বলেন, ‘১০-১১ বছর ধরে খেলছি। একটা বিশ্রাম তো দরকার। এভাবে টানা খেললে এক দুই বছরের বেশি ভালো খেলা সম্ভব হবে না। বিরতিটা যদি পাই, শারীরিকভাবে না যতটা মানসিকভাবে আরো বেশি সতেজ হয়ে ফিরতে পারব। আর তা ছাড়া এমন না যে আমি ক্রিকেটই ছেড়ে দিচ্ছি। এর মধ্যে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলব।
তারপরও অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে গেছে সাকিবের কি সত্যিই বিশ্রামের দরকার ছিল? তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে সাকিবের একটা বিশ্রাম আসলেই দরকার। কারণ ২০০৬ সালের আগস্টে অভিষেকের পর বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্রিকেট খেলেছেন সাকিব। এই সময়ে ছয়টি দেশের আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়েও খেলেছেন এই বাঁহাতি ক্রিকেটার।
বর্তমানে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিবের বেশি টানা ক্রিকেট খেলেছেন কেবল শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও ইংল্যান্ডের মঈন আলী। টেস্ট অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত তিন ফরম্যাট ৭৬৪ দিন মাঠে থেকেছেন সাকিব। ৯১৮ দিন খেলে শর্ষৈ রয়েছেন মঈন আলী ও ম্যাথুজ খেলেছেন টানা ৮৪৮ দিন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের হিসাব করলে সাকিবের চেয়ে এগিয়ে কেবল ম্যাথিউস। তবে ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি, দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স, শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারারা সাকিবের চেয়েও টানা সময় ধরে খেলেছেন। এদের মধ্যে ধোনি তো টেস্টই ছেড়ে দিয়েছেন। সাঙ্গা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। টানা খেলার কারণে এবি ডি ভিলিয়ার্স ইনজুরিতে পড়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে টেস্ট থেকে দূরে রয়েছেন।
এটা সত্য যে সাকিবের তুলনায় কোহলি, আমলা, ওয়ার্নাররা বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। তবে কোহলি ওয়ার্নাররা এত বেশি লিগ ক্রিকেট খেলেন না। তারপর সাকিবকে বাংলাদেশ দলে যেভাবে চাপের ওপর পারফর্ম করতে হয়ে কোহলি-ওয়ার্নার-আমলারা তেমনটা চাপে থাকেন না। ভারতীয় দল হারলে পুরো দায় কোহলির ওপর বর্তায় না কিংবা অস্ট্রেলিয়া খারাপ করলে ওয়ার্নারের ওপর ঢালাওভাবে দায় চাপে না। তবে বাংলাদেশ হারলে প্রথম দায়টা বর্তায় সাকিবের ঘাড়ে। এই কারণে শারীরিক ধকলের চেয়ে মানসিকভাবেই বেশি বিধ্বস্ত থাকেন সাকিব। সেটা কাটিয়ে উঠতে কিছুদিনের বিশ্রাম তো পেতেই পারেন তিনি।