রানাতুঙ্গার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন মুরালিধরন
অর্জুনা রানাতুঙ্গা তাঁর পাশে না দাঁড়ালে মুত্তিয়া মুরালিধরনের ক্যারিয়ারটা ভিন্ন হতে পারত। অধিনায়ক থাকাকালে সব সময় মুরালিধরনের পাশে ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক। সেই মুরালিই কিনা এবার রানাতুঙ্গার বিরুদ্ধে কথা বললেন! ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ২৮ বছর পর আবার ওয়ানডেতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় ভারত। তবে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা ভারতের সেই সাফল্যে কলঙ্ক লেপে দেন। সাবেক লঙ্কান এই অধিনায়ক মনে করছেন, সেবার বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটা পাতানো ছিল। এমনটি না হলে শ্রীলঙ্কাই সেদিন বিশ্বকাপ জিতত। তবে রানাতুঙ্গার এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন মুরালিধরন।
২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে তদন্তে নেমেছে শ্রীলঙ্কার সরকার। তবে দেশটির সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার মুত্তিয়া মুরালিধরন জানিয়ে দিলেন, ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি পাতানো ছিল না। সেদিন ভারতই ছিল জয়ের অন্যতম দাবিদার। মুরালিধরন বলেন, ‘ভারত টুর্নামেন্টের সেরা দল ছিল, আমরা দ্বিতীয় ছিলাম।’
সমালোচকরা দাবি করেন, ম্যাচ ফিক্সিং করতেই ফাইনাল ম্যাচে সেরা কয়েকজন ক্রিকেটারকে বসিয়ে রাখে শ্রীলঙ্কা। যার মধ্যে অন্যতম ছিল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তবে মুরালিধরন বলেন, ‘ফাইনালটা জয়ের বেশ ভালো সুযোগ ছিল আমাদের সামনে। তবে ফাইনালের আগে দুটি ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমত, আমার আর ম্যাথিউসের ইনজুরি ছিল। আর কয়েক ম্যাচ ধরেই আমাদের কয়েকজন ভালো করছিল না। তাই নির্বাচকরা কিছু পরিবর্তন আনতে বাধ্য হন।’ সেবার বিশ্বকাপের সাত ম্যাচে মাত্র ৭০ রান করেন চামারা সিলভা। তাই ফাইনালে তাঁর জায়গায় কাপুগেদারাকে নেওয়া হয়। এ ছাড়া চার ম্যাচে মাত্র তিন উইকেট নেওয়া রঙ্গনা হেরাথের বদলে সুরজ রণদীপকে নেওয়া হয়।
অনেকে টস জেতার পর সেদিন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং বেছে নেওয়াটাকেও অন্যরকম অর্থে দেখেন। এই বিষয়টিরও ভালো ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুরালি। তিনি বলেন, ‘সিনিয়র ক্রিকেটার ও নির্বাচকরা তাড়া করাতে ভয় পাচ্ছিল। কারণ ভারত বিশাল রান দাঁড় করালে ব্যাটিং করার আগেই নার্ভাস হয়ে যেত ব্যাটসম্যানরা। তবে আমার মনে হচ্ছিল আগে বোলিং করলে ভালো হবে। ম্যাচ রেফারি সাঙ্গাকারাকে জানিয়েছিল, রাতে কুয়াশা ঠেকাতে মাঠে রাসায়নিক স্প্রে করা হবে। এতে করে স্পিনারদের বল করতে বা গ্রিপ করতে সমস্যা হবে না। এই কারণেই সেদিন টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা।’
ফাইনালে হেরে যাওয়ার কারণে ভাগ্যকে দোষারোপ করছেন ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক। তিনি বলেন, ‘এটা ভাগ্যের দোষ। কারণ সেদিন স্পিনাররা ভালো করতে পারেনি। আর ম্যাথিউসের ইনজুরি না থাকলে সেই ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হতে পারত। এখানে ফিক্সিংয়ের কোনো প্রসঙ্গ আসা অবান্তর।’
কিছুদিন আগে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ পাতানো ছিল বলে মন্তব্য করেন ১৯৯৬ সালে লঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। এই অধিনায়ক বলেন, ‘আমি সেদিন মাঠে থেকে ধারাভাষ্য করছিলাম। দলের পরাজয়টা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। এই ম্যাচ নিয়ে শুরু থেকেই সন্দেহ রয়েছে আমার। সেদিন ফাইনালে কী ঘটেছিল, সেটা জানা দরকার। এখনই সব কিছু প্রকাশ করতে পারছি না, তবে একদিন সবাই সবকিছু জেনে যাবে।’ কারো নাম না বললেও রানাতুঙ্গা মনে করেন সেই ম্যাচে ম্যাচ ফিক্সিং করেছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। কারণ লঙ্কার দুর্বল ফিল্ডিং ও ঢিলেঢালা বোলিংয়ের কারণে সেই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত।
এর আগে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতিবিরোধী ও নিরাপত্তা ইউনিট (আকসু) একটি গোপন প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ২০১১ সালে বিশ্বকাপে কিছু ম্যাচ পাতানো ছিল বলে তারা সন্দেহ করছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডেইলি মেইল এমন খবর প্রকাশ করে।