‘গর্ভেই তাঁদের মেরে ফেলবেন না’
মেয়ে বলে সব সময় সমাজ ও পরিবারের রক্তশূল হয়ে থাকে তারা। দরিদ্র মা-বাবা সব সময়ই নিজেদের ওপর বোঝা মনে করেন মেয়েদের। কোনোভাবে বোঝাটা অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারলেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁরা। বর্তমান সমাজের সার্বিক চিত্র কিছুটা এমনই। মেয়ে হওয়াটাই যেন একটা বড় পাপ। তবে চিত্রটা বদলাচ্ছে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে দারুণভাবে অবদান রেখে চলেছেন নারীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো তাঁরা পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, অ্যাথলেট মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, মাহফুজা খাতুন শিলারা দেশের পতাকা সবার ওপরে উঁচিয়ে ধরার কাজটি করে চলেছেন।
নারীদের আলোয় ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনও এখন আলোকিত। গত অলিম্পিকে শতকোটি মানুষের এই দেশের সম্মান বাঁচান নারীরাই। পিভি সিন্ধু, দীপা কর্মকার, সাক্ষী মালিকরা দেশের জন্য পদক বয়ে আনেন। এবার ক্রিকেটের দেশটির সম্মান বাঁচিয়ে চলছেন দেশটির মেয়েরা। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ভারতীয় পুরুষ দল সেমিফাইনালেই বিদায় নেয়। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় কোহলির দল। তবে দেশটির মেয়েরা অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে উঠে গেছেন তাঁরা। ফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
নারী ক্রিকেটে দেশটির সর্বশেষ বিপ্লব মিথালি রাজ ও হারমানপ্রিত কাউর। সম্প্রতি নারী ক্রিকেটের সবাধিক রান সংগ্রাহক হয়েছেন দলটির অধিনায়ক মিথালি। আর সেমিফাইনালে ১৭১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে পৌঁছে দেওয়া হারমানপ্রিত তো এখন দেশটির আইকনে পরিণত হয়েছেন। সেদিন ৪২ ওভারের খেলা না হলে হারমানপ্রিত শচীন, শেবাগদের ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটাই ভেঙে দিতেন। ১১৫ বলে ১৭১ রান করেন এই ব্যাটার। শেষ ৪০ বলে ১০০ রান তোলেন তিনি। হারমানপ্রিতের এমন ব্যাটিং ১৯৮৩’র বিশ্বকাপের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা কপিল দেবের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেদিন ১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত যখন ধুঁকছিল। কপিলের ১৩৮ বলে ১৭৫ রানের মাস্টারক্লাস ইনিংসের কারণে ম্যাচটা জিতে ফাইনালে চলে যায় ভারত। বাকিটা তো সবার জানাই।
মেয়ের এমন সাফল্যে দারুণ গর্বিত এই ক্রিকেটারের মা সুখজিত সিং। জানালেন, গোটা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন তাঁর মেয়ে। ফাইনালেও মেয়ের কাছ থেকে এমন ব্যাটিং আশা করছেন তিনি। এই মা জানালেন, তাঁর মেয়ে যেমন দেশের সুনাম রক্ষা করে চলছেন, সুযোগ দিলে বাকি মেয়েরাও এমনটা করতে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘অনেকেই মেয়েদের বোঝা মনে করেন। আমি বলি, মেয়েদের সুযোগ দিলে অন্যরাও দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। গর্ভের মেয়েদের মেরে ফেলবেন না। তারাও দেশের সম্পদ।’