আর্জেন্টিনার হৃদয় ভেঙে চিলির শিরোপা - উৎসব
আর্জেন্টিনা দীর্ঘ ২২ বছর কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতেনি। আর চিলি তো কখনোই চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি এই প্রতিযোগিতায়। অবশেষে চিলিয়ানদের জীবনে সাফল্যের উচ্ছ্লতা। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো লাতিন-আমেরিকান ফুটবল-শ্রেষ্ঠত্বের আনন্দে মেতে উঠল চিলি। ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে কোনো দলই গোল করতে পারেনি।
সান্তিয়াগোর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শুরু থেকে লম্বা পাসে খেলার চেষ্টা করা চিলি ম্যাচের প্রথম তিন মিনিটের মধ্যে দুটো ক্রস থেকে গোলের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুটো ক্রসই ধরতে সমস্যা হয়নি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর। সপ্তম মিনিটে আর্জেন্টিনার সামনেও সুযোগ এসেছিল। তবে অ্যাঞ্জেল দি মারিয়ার বাঁ দিক থেকে নেওয়া ক্রস চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে।
চার মিনিট পর রোমেরোর দৃঢ়তা বাঁচিয়ে দেয় আর্জেন্টাইনদের। ডান দিক থেকে আসা ক্রসে বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া আর্তুরো ভিদালের বাঁ পায়ের শট কোনোরকমে ঠেকিয়ে দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন মেসির দলের গোলরক্ষক। দুই মিনিট পর মেসির একটি প্রচেষ্টা কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন চিলির ডিফেন্ডার গ্যারি মেদেল।
২০ মিনিটের সময় আবার আলবিসিলেস্তেদের জন্য হতাশা। বক্সের ডান দিক থেকে নেওয়া মেসির দুর্দান্ত ফ্রিকিকে হেড করেছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। কিন্তু দারুণ দক্ষতায় হেডটা ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো। পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণ থেকে এদুয়ার্দো ভার্গাসের জোরালো শট চলে যায় আর্জেন্টিনার ক্রসবার উঁচিয়ে।
২৯ মিনিটে আর্জেন্টিনার জন্য বড় ধাক্কা—পায়ের পেশিতে টান পড়ায় মাঠের বাইরে চলে যান দি মারিয়া।
৩৫ থেকে ৪০ মিনিটে চিলির রক্ষণদুর্গে বেশ কয়েকটি আক্রমণ শানিয়েও গোলের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। মেসির ফ্রিকিক থেকে কর্নার হলেও সেই কর্নার কোনোরকমে রক্ষা করেছে চিলির রক্ষণভাগ। প্রথমার্ধের শেষ পাঁচ মিনিট অবশ্য গোলের চেষ্টা করেছে স্বাগতিক দল। বিরতির ঠিক আগে আলেক্সিস সানচেজের শট রোমেরো ধরে ফেলায় আর দি মারিয়ার বদলে নামা এজেকিল লাভেজ্জির জোরালো শট ব্রাভো ফিস্ট করে ঠেকিয়ে দিলে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই একটা সুযোগ পেয়ে যায় চিলি। ডান দিক থেকে নেওয়া সানচেজের ক্রসে হেড করেছিলেন ভিদাল। কিন্তু বল চলে যায় রোমেরোর গ্লাভসে। এই আক্রমণে উজ্জীবিত চিলি প্রথম পাঁচ মিনিটে দুটো কর্নার আদায় করে নিলেও গোলের দেখা পায়নি।
এর পরই আস্তে আস্তে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। একের পর এক আক্রমণ করে একাধিক কর্নারও পেয়ে যায় আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা। কিন্তু গোলের দেখা কিছুতেই পাচ্ছিলেন না মেসি-আগুয়েরো-মাসচেরানোরা।
চিলির সামনেও সুযোগ এসেছিল। ৬৭ মিনিটে সানচেজের ক্রসে ভিদাল শট নিলেও আর্জেন্টিনার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে হতাশ করে চিলিকে।
৮২ মিনিটে আবার চিলিয়ানদের জন্য হতাশা। প্রায় ৩৫ মিটার দূর থেকে নেওয়া চার্লস আরাঙ্গিজের লং বল বক্সের মধ্যে অরক্ষিত সানচেজকে খুঁজে পেয়েছিল। সানচেজের কোনাকুনি শট রোমেরোকে ফাঁকি দিলেও বল চলে যায় সাইডবার ঘেঁষে।
দুই মিনিট পর মেসির ডিফেন্সচেরা থ্রু লাভেজ্জিকে খুঁজে পেলেও অফসাইডের কারণে সুযোগটা নষ্ট হয় আর্জেন্টিনার।
ইনজুরি সময়ে আবার হতাশ হতে হয় আর্জেন্টাইনদের। মেসির মাধ্যমে গড়ে ওঠা দারুণ এক আক্রমণ থেকে গোলের সুযোগ পেলেও আগুয়েরোর বদলে নামা গঞ্জালো হিগুয়াইনের শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তাই ৯০ মিনিট শেষেও ম্যাচের বন্ধ্যত্ব ঘোচেনি।
অতিরিক্ত সময়েও দারুণ উপভোগ্য ছিল লড়াই। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিল চিলি। তবে পাল্টা আক্রমণ থেকে সানচেজের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে গেলে স্বাগতিকদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে তেমন কোনো গোলের সুযোগ তৈরি হয়নি। তাই দুই দলকে দাঁড়াতে হয় টাইব্রেকারের লটারির সামনে।
টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার পক্ষে প্রথম শটে মেসি গোল করলেও হিগুয়াইনের শট চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। পরের শটেও আর্জেন্টিনার জন্য হতাশা। এভার বানেগার দুর্বল শট ঠেকাতে সমস্যা হয়নি ব্রাভোর। তার পরের শটটি চতুরতার সঙ্গে জালে পাঠিয়ে চিলিকে শিরোপার আনন্দে মাতিয়ে তোলেন সানচেজ।