দৃষ্টি আকর্ষণ
‘চাই কৃষকদের জন্য অবসরভাতা ও চিকিৎসা সুবিধা’
কবির কথায়... সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা। এর যথার্থ মর্ম কতটুকু আমরা উপলব্ধি করি, জানি না। কৃষিভিত্তিক এই দেশ, এই সমাজ। কৃষি ও কৃষকরা এই দেশের প্রাণভোমরা। জীবনযুদ্ধে নামার পর এই কৃষকদের নেই কোনো বিরাম, বিশ্রাম। নেই অবসর বলে কিছু। ঝাঁঝা রোদে, প্রবল বর্ষণে, কানফাটা বাঁশির আওয়াজে, কনকনে ঠান্ডায় মাঠে-মাঠে চাষিরা কাজ করে, বীজ বোনে, ফসল ফলায়, ফসল কাটে, চাষিবৌয়েরা ঘরে ঘরে ফসল সামলায়। একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, একজন চাকুরে বা ব্যবসায়ী আরেকজন চাকুরে বা ব্যবসায়ীর খায় না, পরেও না। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের খাবার জোগায় এই কৃষকরাই। অথচ অতীতেও যেমন বর্তমানেও তেমন— কৃষকরা বরাবরই অবহেলার পাত্র। আছেও তারা সমাজের একদম তলায়।
কৃষকদের ফলানো সবুজ থেকে একটু ধার নিয়েই যেন আমাদের পতাকার রং এত ঘন সবুজ। অথচ কৃষকদের জীবনে নেই কোনো সাজ। জীবনপতাকা এদের পুরোনো পতাকার মতো বিবর্ণ-মলিন। তাদের আনন্দ-বেদনার সাথীও কেউ না। তারা পথ চলে একা। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা তাদের কপালে যদিও বা কিছু জোটে, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য, অতি সামান্য।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই কৃষকদের আবেগকে নিয়ে খেলেন রাজনীতিকরা। দেখুন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, জাতীয় সংসদের বর্তমান বিরোধী দলের প্রতীক লাঙ্গল, সাবেক বিরোধী দল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ। তিনটিই কৃষি সংশ্লিষ্ট। ভোটের বাক্স ভরার জন্য ভোটদক্ষিণাটা তাঁরা নেন ষোলোআনা। কিন্তু প্রতিদানে তেমন কিছুই ফেরত দেওয়া হয় না এই অবহেলিত কৃষান-কৃষানীদের।
কথা হলো, কৃষি কাজ করাও তো একটা পেশা। না হোক তা সরকারি। সরকারি চাকুরেরা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছালে অবসরে যান। পান অবসরভাতা। ঠিক তেমনই কৃষকরাও নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছালে তাদের জন্যও চাই অবসরভাতা। চাই চিকিৎসাভাতাও। সমাজে কৃষকের যে বিশেষ অবদান আছে, তার স্বীকৃতিস্বরূপ অবসরভাতা পাওয়ার অধিকার রাখে তারা। প্রথমে কৃষকদের অবসরের বয়স ঠিক করতে হবে। নির্ধারিত বয়সে পৌঁছানোর পর তারা কৃষিকাজ করুক বা না করুক, তাদের ‘অবসরপ্রাপ্ত’ বলে গণ্য করতে হবে। নামধারী কৃষকদের বাদ দিয়ে সব প্রকৃত কৃষক, ভূমিহীন, বর্গাচাষিসহ কিষান-কিষানীদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের অবসরভাতা প্রদানের আওতায় আনা হোক। দেশের আপামর জনসাধারণকে জীবনযুদ্ধে টিকিয়ে রাখার প্রধান অবলম্বন, এই অন্নজাগানিয়া কৃষকদের জন্য আরো চাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো চিকিৎসাসেবা পাওয়ার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা।
মূলকথা, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রকৃত কারিগর এই কৃষকদের জন্য সর্বাগ্রে চাই কৃষিকর্ম অবসরভাতা প্রণয়ন। কলুর বলদের মতো স্বীকৃতিহীন খেটে খাওয়া এই প্রান্তিক মানুষদের চাই স্বীকৃতি। তাদের জীবনে হাসি ফোটাতে বঙ্গবন্ধুতনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা যথেষ্ট মনে করি। আশা করি, বিষয়টি বাস্তবায়নে করণীয় ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীকে প্রাজ্ঞ মতামত ও পরামর্শ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কেননা সুদূরপ্রসারি লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ফলাফলকে মাথায় রেখে সাধারণ জনগণের বৃহত্তর কল্যাণে এ রকম কল্যাণধর্মী কর্মসূচি গ্রহণ বিজ্ঞজনোচিত এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে, তা বলাই বাহুল্য।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ