দৃষ্টিপাত
সংসদ সদস্য কর্তৃক সংবিধান ভঙ্গ
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান কর্তৃক শ্যামল কান্তি ভক্তের লাঞ্ছিত হওয়া ও কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ওই শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরার শাস্তি দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন বলে এই সংসদ সদস্য দাবি করছেন এবং এর দায়ে ফাঁসি কাষ্ঠে গর্বের সঙ্গে ঝুলতেও রাজি আছেন বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলে নিজের কৃতকর্মের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন ওই সংসদ সদস্য। সেই সঙ্গে একজন শিক্ষকের মানবিক মর্যাদার হানি ঘটিয়ে নিজের ক্ষমতার দম্ভকেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সারা দেশের জনগণ। প্রতিদিন বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে জনসাধারণের পক্ষ থেকে এর নিন্দা ও ধিক্কার জানানো হচ্ছে। সংবাদের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন এই শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক ও এক ধরনের ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে এই ঘটনার জন্য দায়ী সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে আইন ও বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকরা অভিভূত হয়েছেন যে, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সাজানো নাটকের মধ্য দিয়ে তাঁকে পদচ্যুত করার চক্রান্ত করা হয়েছিল। সে কারণে স্কুল পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে তাঁকে স্বপদে বহাল করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এবং প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে এই সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছে ও ক্ষমতার দম্ভে নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে এই প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কথিত ধর্ম অবমাননার ‘অভিযোগে’ অমর্যাদাকর শাস্তি দিয়েছে।
এই কাজটিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান একজন জাতীয় সংসদের সদস্য কর্তৃক সংবিধানের ১১ ধারায় মানব সত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করায় রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার এবং সংবিধানের ২১ ধারার বিধান অমান্য করে সংবিধান ভঙ্গ করার মতো অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিচার দাবি করেছেন।
সেলিম ওসমান শুধু সংবিধানের উপরোক্ত বিধানই ভঙ্গ করেননি, এর সঙ্গে সংবিধানের ২১ ধারায় প্রদত্ত বিধান ও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথও ভঙ্গ করেছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সনদ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের চেতনাকেও ভুলুণ্ঠিত করেছেন। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে অবমাননাকর অমন শাস্তিদানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে এবং নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে শাস্তিদানের স্পর্ধা দেখিয়ে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের ক্ষমতার দম্ভকে প্রতিষ্ঠিত করে, রাষ্ট্রের সব আইনের ঊর্ধ্বে নিজেকে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য থাকার সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম : সভাপতি, গণতান্ত্রিক সংবিধান সংগ্রাম কমিটি এবং সদস্য, কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটি, গণসংহতি আন্দোলন।