আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস
অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে কাস্টমস
২৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস। এ বছরের (২০১৮) থিম হলো—A secure business environment for economic development। ২০০৯ সাল থেকে কাস্টমস সংগঠনগুলো বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর এই দিনটি পালন করে থাকে। দিবসটি উদযাপনের গুরুত্ব হলো আন্তর্জাতিক কাস্টমস সংগঠনগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো এবং একই পদ্ধতিতে কাজ করার সক্ষমতা তৈরি করা। বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় মানুষের সংকটের শেষ নেই। সেখানে রয়েছে বৈধ পণ্যের সঙ্গে অবৈধ পণ্য এক করার চেষ্টা। সেখানে রয়েছে মাফিয়াচক্রের তৎপরতা। মানুষকে ভালোভাবে ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। মানুষকে সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি থেকে মুক্ত রেখে এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রস্তুত করতে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস পালন করা হয়ে থাকে। দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য এ রকম—
১. International Customs Day is used to celebrate for improving the effectiveness and efficiency of the Customs Administration Members.
২. It is used to help the Custom Members Administration to make the Custom to develop in a better way.
৩. It is used to accomplish the Objectives of the International Level.
৪. It is used to improve the Collection of the Revenue, Protection of the Community, National Safety and Collection of the Trade Statistics.
দিবসটি পালনের জন্য ডব্লিউসিও বা ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন বর্তমানে প্রশাসনিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যারা কেবল বিশ্বব্যাপী কাস্টমস-সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে থাকে। ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্রাসেলসে কাউন্সিল অব কাস্টমস কোঅপারেশন (CCC) গঠিত হয়। দুই বছর পর ১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর শুরু হয় এর কার্যক্রম। ১৯৫৩ সাল থেকে ২৬ জানুয়ারি এটির প্রথম সেশনে ইউরোপের ১৭টি দেশ উপস্থিত ছিল। তারা বিশ্বব্যাপী এর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সূচনা করে। ১৯৯৪ সালে কাউন্সিল অব কাস্টমস কোঅপারেশনের নাম পাল্টে গঠিত হয় World Customs Organization (WCO)। বর্তমানে ১৭৯ টি দেশ এই সংগঠনের সদস্য।
২.
ডব্লিউসিও বা ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন সৃষ্টি হয় ১৯৫২ সালে। বিশ্বব্যাপী কাস্টমস প্রশাসনকে গতিশীল ও কার্যকর করার জন্য এর পথচলা শুরু হয়। সে সময় থেকে নির্দিষ্ট থিম বা বিষয়বস্তু নিয়ে প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি সংগঠনটি গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি পালন করে থাকে। দিবসটি উদযাপনের শুরুতে মূল লক্ষ্য ছিল কোনো প্রকাশ অন্যায় এবং চৌর্যবৃত্তি ছাড়াই মানুষের সঙ্গে কাস্টমস সদস্যদের নিরাপদ ও নিরাপত্তা বহাল রাখা। এ কথা সত্য যেকোনো রকম অন্যায়-অবিচার-দুর্নীতি ছাড়া সুন্দরভাবে যেকোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই কঠিন। তবু মানুষকে সেবা দিতে হলে অসততা পরিত্যাগ করতেই হবে।
ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডে উদযাপনের আরো একটি তাৎপর্য হলো, ভয়ংকর সব দুর্নীতি ও কর বা ভ্যাট ফাঁকির মতো অপকর্ম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা। তা ছাড়া কাস্টমস প্রশাসন প্রকৃত অর্থে কীভাবে পরিচালিত হয়, তার কার্যধারা কেমন, কাস্টমস অফিসারের দায়-দায়িত্ব কী—এসবও আলোকপাত করা হয় দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে। তবে মূল টার্গেট থাকে জনসেবার চেতনা জাগ্রত করা। ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডে প্রমাণ করেছে যে কাস্টমসের প্রতিটি কাজ মূল্যবান এবং জনসেবার সদিচ্ছা নিয়ে সরকার ও মানুষের পাশে থাকা এ সেক্টরের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। এদিবসটি আরো জানান দেয় যে, মানুষের পণ্যসামগ্রী সুরক্ষা করতে হবে, দিতে হবে নিরাপত্তা। সে ক্ষেত্রে মন্দ লোকের কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করা এবং সৎ ও বিবেচকের মতো এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানি-আমদানি সুশৃঙ্খলিত করা কাস্টমসের নীতি। অন্যদিকে এই সেক্টরটি মানুষকে ভাবতে বাধ্য করায় যে, তাদের ও তাদের দ্রব্যাদির নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে, আছে অপশক্তির হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ারও। অসৎ লোকদের বিপজ্জনক পরিকল্পনা ও অভিসন্ধি ভেস্তে দিতে পারে কাস্টমস কর্মকর্তারা। চোরাচালান রোধ করে দেশের সম্পদ রক্ষার দায়িত্বও তাদের। অন্যদিকে সরকারের আর্থিক খাতকে সাহায্য করার রাজস্ব ফাঁকি ধরিয়ে দিতেও তারা সক্ষম হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতায় অবৈধ পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তারা।
ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডে আমাদের জানার পরিধি বাড়িয়ে দেয়। মানুষের কল্যাণে কী করণীয়, তার অনুপুঙ্খ উন্মোচন ঘটে দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে। বিরূপ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এবং অপশক্তিকে মোকাবিলার জন্য এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিবসটি মানুষকে বিচিত্র ধারণা দিয়ে গঠনমূলক পথে চলতে উৎসাহী করে। দেশের অগ্রগতিতে কাস্টমস বিভাগের ভূমিকা আজ সকলের কাছে স্পষ্ট।
যেকোনো সমস্যা এলে তার সমাধান সব সময় খুব একটা সহজভাবে সম্পন্ন নাও হতে পারে। যথার্থ সমাধানের পথ অন্বেষণ করতে হয় মানুষকে সঠিক ধারণা দিয়ে। সে ক্ষেত্রে উত্তম ফল লাভের জন্য ভালো কাজ ও ভালো ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। কাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য আইডিয়া তৈরি হবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। এ জন্য দিবসটিতে সারা পৃথিবীর কাস্টমস অফিসারদের কাছ থেকে তাদের কাজের নির্দেশনা পাওয়া যায়।
বর্তমান সময় মানুষ কী চায়? ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য যা কিছু হুমকি, তা মোকাবিলা করতে চায় মানুষ। আর দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া কাস্টমসের অন্যতম কাজ। মানুষের চাহিদা পূরণ করে তাদের ব্যবসায় সাফল্য আনতে পারে একজন কাস্টমস অফিসার। যেকোনো ব্যক্তির ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ডের সুবিধা-অসুবিধা এবং ভালোভাবে তথা নিরাপদে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সহায়তা করাও অফিসারদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
৩.
ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডে প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে উদযাপিত হচ্ছে। আর এই দিবসটি সাধারণ মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কাস্টমস বিভাগ সম্পর্কে সচেতন করে তুলছে। বিশেষত, বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবিলা ও নিরাপদে পণ্য আদান-প্রদান যেখানে মুখ্য বিষয়। দিবসটির থিম নির্ধারণ হয়ে থাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা ও সুগম্যতার দিক বিবেচনা করে যেখানে মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায় এবং সজাগ হয় তারা নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে। ফলে মানুষ ব্যবসা শুরু করার আগে নিরাপত্তার ধারণা নিয়ে নিজেদের কার্যক্রম সাজাতে সক্ষম হয়। মানুষ সরকারের কাছ থেকেও তাদের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক জেনে সতর্ক হয়। যেকোনো দেশের সরকার কাস্টমস দিবসকে সে জন্যই গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকে।
ক) ২০০৯ সালে দিবসটির থিম ছিল- Environment and Customs prevent the Natural Heritage
খ) ২০১০ সালে ছিল - Business and Customs develops the performance by Partnerships
গ) ২০১১ সালে ছিল- Knowledge a powerful tool for the Customs Excellence” to provide a better rule for safeguarding any business activities.
ঘ) ২০১২ সালে ছিল- Customs Join and Borders Divide.
ঙ) ২০১৩ সালে ছিল- Invention for the Customs Development.
চ) ২০১৪ সালে ছিল- Sharing information through Communication for better Cooperation.
ছ) ২০১৫ সালে ছিল- Coordination of the Border management an approach for connecting the Stakeholders.
জ) ২০১৬ সালে ছিল- Electronic Customs Developing Engagement.
ঝ) ২০১৭ সালে থিম হিসেবে গৃহীত হয়েছিল - Effective Management of the Borders for Data Analysis.
ঞ) ২০১৮ সালে থিম হলো- A secure business environment for economic development.
ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডের উপরিউক্ত থিমসমূহ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ এবং একজন ব্যক্তি সহজেই তার নিজের ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই বিষয়গুলো থেকে যথার্থ জ্ঞান লাভ করে নিজে সতর্ক থাকতে পারে এবং সাফল্য অর্জন করতে পারে। মানুষের এগিয়ে যাওয়া ও বিশ্বব্যাপী নিরাপদ কার্যক্রমে ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডের অর্জন অনেক। বাণিজ্যের সঠিক পথ চিহ্নিতকরণে দিবসটি ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষের যা কিছু প্রয়োজন ও এগিয়ে যাওয়ার জন্য যথার্থ বিবেচিত তার সম্যক ধারণা তৈরি করে দিচ্ছে দিবসটির থিমসমূহ। মানুষ বাস্তব বোধবুদ্ধি দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে যেমন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, তেমনি তথ্যের ভ্রান্তিও ঘটে। তবে ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডে ভ্রান্ত তথ্য দেয় না কখনো। মানুষ সম্ভবতই নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। এ ক্ষেত্রে মানুষকে রাষ্ট্র ও সরকারের বিধিবিধান জানিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সহায়তা করে কাস্টমস বিভাগ। দেশের বাণিজ্য প্রসারে এভাবে ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডে উদযাপন হলে সারা পৃথিবীর শৃঙ্খলায় পরিচালিত হবে।
৪.
ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমস ডে পালনের মধ্য দিয়ে মানুষ এগিয়ে চলার সুন্দর পথ আবিষ্কার করছে। বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন স্বচ্ছতা। আর নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা কে না চায়? এ জন্য মানুষ দিবসটির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। ডিজিটাল পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে অনুসৃত হওয়ায় এখন কাস্টমসের কর্মকাণ্ডও অতীত থেকে ভিন্ন। এ জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষ দিবসটি থেকে শিক্ষা নিতে চায়। দিবসটি মানুষকে তার পণ্য-দ্রব্যাদিও নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। অনেক ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে। ভালোভাবে ভালো উপায়ে কাজ করতে হলে উত্তম প্রশাসন নিশ্চিত করা দরকার। এই দিবসটি সেসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
প্রকৃতপক্ষে ডব্লিউসিও (World Customs Organisation) দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি দেশের কাস্টমস বিভাগকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী দরকারি অনেক কাজই করা হয়েছে দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মোকাবিলা করে নিরাপদে নিজের দেশের উন্নয়নে সকলে সচেতন হয়ে উঠেছে।
মানুষ নিয়ত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিপদের মধ্যে থাকে। তার পেছনে লেগে থাকে ঠকবাজ আর দালালরা। সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার নিশানা নিয়ে এই দিবসটি হাজির হয় প্রতিবছর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৈধ পথ দেখিয়ে দেয় দিবসটি। মানুষকে সচেতন করে দুষ্ট ও ক্ষতিকর চক্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। আর নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে দেয় ব্যবসায়ীদের। তা ছাড়া কাস্টমসের নিজেরও নিরাপদ জায়গা সৃষ্টি হয় এসব কাজের মধ্য দিয়ে।
দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো দেশ ইতোমধ্যে নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। দেশে দেশে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক ফ্যাশনের প্রবণতা আর বিচিত্র চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। এক জিম্বাবুয়ের মতো দেশ তাদের অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলেছে। বেড়েছে তাদের রাজস্বও।
৫.
আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসে কাস্টমস অফিসাররা তাদের দৃষ্টান্তমূলক কাজগুলো তুলে ধরার সুযোগ পান। ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স আর থিম নিয়ে চলে আলোচনা। অন্যদিকে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্তাব্যক্তিরা সজাগ হয়ে ওঠেন। দিবসটিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনগণকে কাস্টমসের কাজ, দায়-দায়িত্ব নিয়ে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অবগত করা হয়।
লেখক : জ্যোৎস্না তঞ্চঙ্গ্যা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, সিলেট।