শিক্ষা
মানবিকে ফল বিপর্যয় কেন?
এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এবারের ফলাফল অত্যন্ত খারাপ। তবে ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার চেয়ে মানবিক শাখার পরীক্ষার্থীদের ফলাফল বেশি খারাপ। মূলত মানবিক শাখার ফলাফল খারাপ হওয়াতেই পুরো উচ্চ মাধ্যমিক রেজাল্টে বিপর্যয় দেখা দিছে।
কেন মানবিক শাখার পরীক্ষার্থীরা এত বেশি খারাপ করল, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমার কাছে ‘প্রশ্ন-বৈষম্য মূল কারণ’ হিসেবে বারবার মনে হয়েছে। এই বছরের প্রশ্ন ও মানবণ্টনে যে পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে, সেটা মানবিক শাখার পরীক্ষার্থীদেরই বেশি ভোগান্তির মধ্যে ফেলল। কারণ এই নিয়মে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক শাখার প্রশ্নে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন বৈষম্য করা হয়েছে। যেখানে দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটে বিজ্ঞান শাখায় একজন শিক্ষার্থীকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে, সেখানে মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের একই সময়ে সাতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞানের তুলনায় মানবিক শাখার প্রশ্নের উত্তরে লিখতে হয় অনেক বেশি। নির্ধারিত সময়ে মানবিক শাখার অনেক শিক্ষার্থী সাতটি প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারেনি। তাহলে মানবিক শাখার ফলাফল খারাপ হওয়াটা একদম স্বাভাবিক।
এর ফলাফলও আমরা গতকাল হাতেনাতে পেলাম। এ বছর মানবিক বিভাগে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অন্য দুই বিভাগের চেয়ে বেশি ছিল। অথচ পাসের হার সবচেয়ে কম। নয় লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে চার লাখ ৮৭ হাজার ২২৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে দুই লাখ ৮৩ হাজার ২৯৩ জন। অংশগ্রহণকারীদের ৬০ শতাংশও পাস করতে পারেনি।
ফলাফল বিপর্যয়ের প্রভাবও পড়েছে মানবিক শাখার ফলাফলে। এই বছর নতুন পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। পরীক্ষকদের একটি করে মডেল উত্তর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই মডেল উত্তর বিজ্ঞান শাখার জন্য যতটা কার্যকরী, মানবিক শাখার জন্য কিন্তু ততটা নয়। কারণ বিজ্ঞান শাখার সব উত্তরে থাকে গাণিতিক যুক্তি। সুতরা একজন শিক্ষার্থী যা উত্তরই লিখুক না কেন সব সঠিক উত্তরে থাকবে একই গাণিতিক সূত্র। তা ছাড়া গ্রামগঞ্জের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয়। শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এই শিক্ষকরা যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর করা শিখিয়েছেন, সেই উত্তরগুলো হয়তো মডেল উত্তরের সঙ্গে এক ছিল না। যার দরুন ফলাফল খারাপ হয়েছে।
এ ছাড়া আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যারা একটু বেশি মেধাবী, তারা বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করতে বেশি আগ্রহী হয়। শুধু এ বছরের ফলাফলে নয়, গত কয়েক বছরে বারবার মানবিক শাখার পরীক্ষার্থীরা বেশি খারাপ করে। আর মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের মূল সমস্যা ইংরেজিতে। প্রতিবছর মানবিক শাখায় ধস নামে ইংরেজিতে খারাপ করা কারণে। এই বছরও তাই হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ফেল করায় মানবিক শাখার ফলাফলে বিপর্যয় দেখা দিয়ছে।
লেখক : শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়