তাহসান-মিথিলার বিচ্ছেদ এবং ভক্তদের আবেগ
শিক্ষিত, মার্জিত এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত দুটি মানুষ একসঙ্গে ১১ বছর সংসার করার পর সিদ্ধান্ত নিল এক ছাদের নিচে আর বসবাস নয়! এখন সময় এসেছে একে অন্যের থেকে পৃথক থাকার। যাদের কিনা ফুটফুটে একটা সন্তানও আছে! সময়ের আলোচিত এই বিবা বিচ্ছেদে তাই অনেকেরই প্রশ্ন; আসলেই কি দরকার ছিল এটার? সেটার ঠিক ঠিক উত্তর পাওয়া যাবে কি না নিশ্চিত না হলেও তাহসান ও মিথিলার বিবাহবিচ্ছেদ আমাদের বেশ কিছু বার্তা দিয়ে গেল। যেমন তাঁদের অনেকেই জুটি হিসেবে আইকন বিবেচনা করত। রঙিন পর্দায় তাঁদের একসঙ্গে উপস্থিতি আরো ঝলমলে করে তুলত তাঁদের রয়ায়ন। সেই বিবেচনায় বাহ্যিক বিষয় মাথায় না নিয়েই সুখী দম্পতি ধারণায় একটা পরিবর্তন আশা করা যায়। যারা আইকন মানত, তাদের হতাশার যে শেষ নেই; সেটা প্রমাণ মিলেছে ঘটনার পর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায়।
সংসার করছে যারা, তাদের দুজনের সম্মতিতে শতভাগ অধিকার আছে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার। যদিও বা ভক্তশ্রেণি আর ক্যারিয়ারের কথা ভেবে অনেকেই বিষয়গুলো চেপে যেতে চায়। কিন্তু তাহসান ও মিথিলার ক্ষেত্রে সেটা না হয়ে বরং সময় নিয়ে উভয়ে মিলে বেশ সম্মানের সঙ্গে জনসম্মুখে বিষোদগার না করেই সবাইকে বিষয়টা জানিয়ে দিল। আমরা এখন পৃথক বসবাস করব। এটা একটা দৃষ্টান্ত হিসেবেই থাকবে। কিন্তু আপত্তির জায়গা হলো, ভক্তরা ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে এই বিবাহবিচ্ছেদ মেনে না নিয়ে শাহবাগে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেওয়ায়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটা নিয়ে সরব হওয়াটা ছিল অবাক করার মতো! এটা আবারও প্রমাণ করে আমরা ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়াতে বেশি পছন্দ করি!
ভক্তদের আবেগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যদি হয় অনিয়ন্ত্রিত, তাহলে সমস্যা। কারো ঘরের বিষয় মাঠে নিয়ে এসে টানাহেঁচড়া করার অভ্যাস আমাদের গেল না। এই তো সেদিন শাহবাগে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে গিয়ে একজনের দুই চোখে গুলি লেগে নষ্ট হলো। কই, আমরা কেউ তো সেটা নিয়ে প্রতিবাদের কথা ভাবছি না। এদিকে তাহসান-মিথিলার বিবাহবিচ্ছেদ মেনে না নিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামার জন্য প্রস্তুত! বাস্তবে কী হবে সেটা অবশ্য পরের বিষয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিচ্ছেদ নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের কথাই এসেছে। সাধারণত, নেতিবাচক কথা বেশি এসেছে এবং অনেকেই এ সিদ্ধান্তকে কঠোর সমালোচনা করেছে। এটা ভালোবাসার অসাধারণ এক রূপ। হয়তো সব আবেদনে সাড়া মিলবে না; তবু পাশাপাশি চলার একটা আনন্দ তো আছে। নানা মুনির নানা মত। এখানেও যে যার মতো করে ভাবছে এবং প্রকাশ করছে।
কিন্তু এটা মনে রাখা প্রয়োজন, জীবনের প্রয়োজনে আপনার সিদ্ধান্ত কিন্তু আপনাকেই নিতে হয় এবং এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয় যেটার জন্য আপনি কখনো প্রস্তুত থাকেন না। তারপরও আপনাকে পরিস্থিতি মেনে নিয়ে চলতে হয়। সাময়িক সময়ের ধাক্কা সামলে সামনে আগানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হয়। জীবন থেমে থাকে না। তাহসান ও মিথিলার জীবনও থেমে থাকবে না। প্রতিষ্ঠিত সৃজনশীল দুটো মানুষ তাঁদের সৃজনশীলতা দিয়ে মানুষের মনে আবারও জায়গা তৈরি করে নেবেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে হয়তো তাঁরা আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত হবেন। কিন্তু আক্ষেপ একটা থেকেই যাবে তাহসান-মিথিলা আর একসঙ্গে নেই। সময়ের প্রয়োজনে তাঁরা এখন দুই পথের পথিক।
লেখক : শাবিপ্রবি সংবাদদাতা, এনটিভি অনলাইন