অভিমত
ব্যবসায়ীদের এদিক-ওদিক
রোজা আসার এক মাস আগে থেকে জিনিসপত্রের দাম যেন না বাড়ে সে জন্য নানাজন নানা মত ব্যক্ত করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও বলেছেন, রোজার মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল থাকবে। পত্র পত্রিকায় সেগুলো প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ কিছুটা আশান্বিত ছিল, যাক এবার রোজায় অধিক মুনাফাখোরদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
কিন্তু যারা অল্প আয়ের মানুষ, যাদের পণ্য কিনে ঘরে দুয়েক মাসের জন্য মজুত করার সামর্থ্য নেই, তারা পড়েছে বিপদে। রোজার দু-একদিন আগে বাজারে সব ধরনের পণ্যের মূল্য অহেতুক বাড়িয়ে দিয়েছে অধিক মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা। আর এই যে বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের মূল্য, এর জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো তদারকি চোখে পড়ছে না।
গত ২৩ মে আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সারা বছর সুবিধা করতে না পেরেই রোজার মাসে বেশি আয় করার জন্য ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দামে একটু এদিক ওদিক করে। এটা আমার উপলব্ধি। একটা পণ্যের দাম বাড়তে পারে যখন ওই পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি থাকে। বাজারে তো কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই।’ তিনি এই ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আন্তজার্তিক বাজারে বর্তমানে চিনির দাম কম-এ কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশে চিনির মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। টিসিবির চেয়ারম্যানকে আরো চিনি কিনতে বলা হয়েছে। খোদ মন্ত্রী যেখানে বলেন, দেশে পণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, সেখানে তা হলে ঘাটতির কথা বলে দাম বাড়াচ্ছে কারা? তারা কতটা প্রভাবশালী যে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অক্ষম।
এখন আসা যাক মন্ত্রীর ওই কথা আসলে কতটা যুক্তিসঙ্গত? সারা বছর সুবিধা করতে না পেরেই রোজার মাসে বেশি আয় করার জন্য ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম একটু বাড়িয়ে এদিক ওদিক করেন। আমরা কি ধরে নিব সারা বছর ব্যবসায়ীরা লস করে? তাদের লাভ হয় না? মন্ত্রী কি এই কথাটাই বলতে চেয়েছেন? এটা কি পাগলেও বিশ্বাস করবে? এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। শুধু বলার জন্য বলা। আমরা তো ধরে নিতেও পারি মন্ত্রী ওই কথাটিতে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশিত হলেও পক্ষান্তরে ব্যবসায়ীদের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। তা না হলে কোন সাহসে রোজার মাসে, যে দেশের বেশির ভাগ মানুষই মুসলমান, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এক মাস রোজা রাখে, সে মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মুনাফাখোররা টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন?
রোজার দ্বিতীয় দিনেই জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম, চালের দাম বেশি, কষ্ট দিচ্ছে ‘ভিআইপি’ পণ্য চীনা রসুন। এ রসুনের দাম ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা। সেই রসুন এক লাফে চার শ টাকা হয় কি করে?
চালের দাম বেড়ে যা হয়েছে, তা রীতিমতো মগের মুল্লুক ছাড়া অন্য কোথাও এভাবে বাড়ে কি না সন্দেহ। ২৮ জাতের চাল আগে ছিল ৩৮ টাকা, এখন সেটা ৫২ টাকা। ভাবা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষ কোথায় যাবে? লম্বা বেগুন কদিন আগে ছিল ৫০ টাকা, এখন সেটা ১০০ টাকা কেজি। চিনির দাম ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা।
মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের একটু এদিক ওদিক করার প্রবণতা বন্ধ করেন। আপনি যেভাবে বলেছেন এদিক ওদিক করেন, এটাতে ব্যবসায়ীরা উৎসাহিতই হবেন। কারণ আপনি তাদের এদিক ওদিক না করার পরামর্শ দেননি। এতে তারা সাহস সঞ্চয় করে অধিক মুনাফার আশায় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। যা আপনার সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য যথেষ্ট। কারণ যারা মুনাফাখোর তারা সব সময় সুযোগ খোঁজে কীভাবে জিনিসপত্রের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো যায়। এদের জন্য দরদ দেখানো পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সমান কথা। আজই সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এসব ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিন। নইলে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়বে।
লেখক : ছড়াকার ও সাংবাদিক