প্রতিক্রিয়া
তারকাদের গোপন প্রেম, বিয়ে, অতঃপর
তারকাদের প্রেম ও বিয়ের গুঞ্জন নতুন কিছু নয়। হলিউড, বলিউড, টলিউড ও ঢালিউডে যুগে যুগে, কালে কালে তারকাদের প্রণয়ের গুঞ্জনে বাতাস ভারি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এমনিতেই তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কমবেশি কৌতূহল থাকে সবারই। আর তা যদি হয় প্রেম-বিয়ে সংক্রান্ত, তাহলে তো কথাই নেই।
একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বন্ধুত্ব-প্রেম-বিয়ে স্বাভাবিক ঘটনা। অস্বাভাবিক হলো দিনের আলোর মতো সত্যকে সবার কাছ থেকে গোপন করার চেষ্টা করা। এতে বেশি করে আলোচনা আসে তারকাদের প্রেম-বিয়ের বিষয়টি। অনেকে অবশ্য খানিকটা গোপনীয়তা বজায় রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে মাঝে মাঝে সেই গোপনীয়তা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে বহুদিন পরও ভক্তরা খবরও পায় না তার স্বপ্নের তারকা ইতিমধ্যেই বিয়ে করে সংসার পেতেছেন।
উঠতে বসতে যে তারকারা খবরের শিরোনাম হয় তাদের বিয়ে নিয়ে কেমন মাতামাতি হয় তা সহজেই আঁচ করা যায়। আবার বিয়ে করে ফেলাটা এমন একটা বিষয় যা তারকার তারকাখ্যাতিতেও এনে দেয় ব্যাপক পরিবর্তন।
এরচেয়েও কমন একটি ব্যাপার হলো তারকারা বরাবরই সম্পর্ক নিয়ে লুকোচুরি খেলতে পছন্দ করেন। একসঙ্গে ঘুরে বেড়ান, একসঙ্গে উঠেন বসেন দম্পতিদের মতো। তবু যদি কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হয় তবে এক গাল হেসে জবাব দেন- ‘ ছিঃ ছিঃ। আমরা খুব ভালো বন্ধু।’ প্রেমের রকম-সকমে অনেক পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও, তারকাদের অজুহাতে পরিবর্তন আসেনি।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, তারকারা গোপনে প্রেমের সম্পর্ক চর্চা করেন কিন্তু খবর প্রকাশ হলে সাংবাদিকতার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রেমের খবর মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে দুটি বিষয় ঘটে। যদি প্রেম ভেঙে যায় তবে আর কোনো হিসাব-নিকাশ থাকে না। কিন্তু যদি তাঁরা বিয়ে করেন, তখন প্রেমের খবর চেপে হলুদ সাংবাদিকতা বলে চিৎকার করার কারণ জানতে চাইলে শুধুই নির্লজ্জ হাসি ঝরতে থাকে। এমনটা অহরহ দেখা যায়। আবার কেউ কেউ অকপটে স্বীকার করে নেন সে সব কথা।
এবার আসি টক অব দ্য কান্ট্রিতে— শাকিব-অপু!
প্রায় এক দশক ধরে শোবিজে গোপন সম্পর্কের সবচেয়ে আলোচিত দুটি নাম শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। আধুনিক সময়ে এখনো ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সেরা জুটি। একসঙ্গে জুটি বেঁধে তারা প্রায় সত্তরটি ছবিতে কাজ করেছেন। তাঁদের এই পথচলায় মিডিয়া পাড়ায় অসংখ্যবার দুজনের অভিসারর কিংবা গোপন বিয়ের খবর শোনা গেছে। তাদের প্রেম-বিয়ের খবরে পত্রিকাগুলো সরব থাকলেও দুজনেই সবসময়ই খুব কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
তবে তারকাদের বক্তব্যে পাপ্পারাজিদের নাকে সন্দেহের গন্ধটা মুছে যায়নি বরং জোরালো হয়েছে তাঁদের কর্মকাণ্ডেই।
দেখা গেল টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলের রিয়েলিটি শোতে তারা আসছেন রীতিমতো স্বামী-স্ত্রীর মতো করেই। কথাবার্তাতেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন একে অন্যের রান্না ঘরটা যেমন চিনেন, তেমনি শোবার ঘরটাও মুখস্ত। শাকিব তার নিজের বিপরীতে অপুকে নায়িকা করতে পরিচালকদের অনুরোধ করেও সম্পর্কের গভীরতার প্রমাণ দিয়েছেন। বাকি ছিল কেবল স্বীকারোক্তি। কিন্তু তা এমন নাটকীয়তায় হবে তা হয়তো কেউই ভাবেনি!
প্রায় এক বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর (যার টিকিটিও খুঁজে পায়নি কেউ) হঠাৎ শাকিবের ছেলে কোলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরে হাজির অপু! হাটে হাড়ি ভাঙ্গা আর কাকে বলে! ঢালিউডের ইতিহাসে এমনটি আগে কখনো ঘটেনি।
সিনেমার কাজ শেষে আগের দিনই কলকাতা থেকে ফিরেছেন ক্লান্ত শাকিব। সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে স্বীকার করেছেন আব্রাহাম খান জয় তারই ছেলে কিন্তু রেগে গিয়ে এটাও বলেছেন তিনি অপুর দায়িত্ব নেবেন না। এ ছাড়া একেক মিডিয়াতে তিনি একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন, হয়তো মানসিক চাপ আর রাগে। পরে অবশ্য অপুকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেছেন। এও স্বীকার করেছেন আগের কথাগুলো ছিল রাগের মাথায় বলা।
এসব তো গেল। প্রেম ও বিয়ে নিয়ে শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের লুকোছাপার কারণ কী? প্রেম কিংবা বিয়ের পরে ক্যারিয়ারে ধস নামে? নাকি প্রেম-বিয়ের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান থাকেন তারকারা? অনেক তারকা বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়- বিয়ের পরই মিডিয়া ছাড়ছেন। তবে কি সংসার জীবন আর শোবিজ দুনিয়া জীবনের দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে? প্রশ্নের বৃষ্টিতে ভেজে মিডিয়া, আর পর্দার মতো বাস্তব জীবনেও প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খান তারকারা। চুটিয়ে প্রেম করেন, অনেকেই গোপনে বিয়ে করেন, আবার কেও বা লিভ-টুগেদারও চালিয়ে যান। বেশির ভাগ তারকার কাছেই প্রেম-সংসার অনেকটা তাসের ঘরের মতো, প্রথম কিছুদিন সব ঠিক তার পরই দমকা হাওয়ায় সবকিছু লণ্ডভণ্ড।
তবে বিদেশি তারকাদের সঙ্গে দেশীয় তারকাদের অনেক পার্থক্য ছিল। সম্পর্ক চর্চার ক্ষেত্রে দেশীয় তারকারা আগে অনেকটাই দেশীয় সামাজিকতা মেনে চলতেন। কিন্তু দিন দিন বিদেশি তারকাদের মতোই হয়ে যাচ্ছেন দেশীয় তারকারা। এটাকে অনেকে তারকাদের অনুকরণ মনোভাব মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন, মিডিয়ায় কাজ করলে কেউ ঠিক থাকতে পারেন না।
অনেকে মনে করেন আপার ক্লাসে এসব সমস্যা একটু বেশি। সহজে মিশে যওয়া, চোখ ধাঁধানো প্রলোভন, একাকিত্ব ইত্যাদি ছাড়াও যাদের জীবনে উচ্ছৃঙ্খলতা-বন্ধনহীনতা, একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলতা ও আস্থা না থাকায় তৈরি ব্যক্তিত্বের সংঘাত ইত্যাদি কারণে দ্রুত সম্পর্ক তৈরি ও বিচ্ছেদ ঘটে।
তারকাদের অনেকে মনে করেন 'আদর্শ'। তাদের কাছ থেকে ভক্তরা অনেক কিছু শেখেন। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, তারকারা আগের সেই অবস্থানে আর নেই। আদর্শ বিকিয়ে দিয়েছেন। তাই তাঁরা এখন সমালোচনার কাঠগড়ায়।
তবে শেষ কথা হলো, তারকারা দর্শকদের কাছে রোল মডেল। তাঁরা যা করেন, ভক্তরা সেটাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। তাই তারকাদের সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে, বিষয়টি তাদের ভেবে দেখতে হবে। অন্য দশজন মানুষের মতো তাঁরা নন।
লেখক : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়