ডাকসু নির্বাচন
রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরও উদ্যোগ নেই কেন?
ডাকসুসহ সারা দেশে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন একটা নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে ছাত্রনেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। তারা নিজেদের সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমরা লক্ষ করছি, ছাত্রদের ব্যবহার করা হতো বা করা হচ্ছে এখনো ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে। যারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা মনে করে কলেজ সংসদ, বিশেষ করে ডাকসুতে হেরে গেলে তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা কঠিন হবে। এ জন্য নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্যই তারা এ ধরনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে। এর কারণ অতীতে দেখা গেছে, ডাকসু নির্বাচনে সাধারণত ক্ষমতাসীনরা জয়ী বা নির্বাচিত হয় না। ক্ষমতার বাইরে থাকা ছাত্রসংগঠনই জয়ী হয়।
আমরা খুবই বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধাভাজন ভিসি, তিনিও মনে করেন, নির্বাচন হওয়া উচিত। সব ছাত্রসংগঠন মনে করে, নির্বাচন হওয়া উচিত। তারপরও নির্বাচন হয় না। সর্বশেষ দেখলাম, আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে বললেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ইজ এ মাস্ট।’ মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই কথা বলা মানেই তো হচ্ছে এটা এক ধরনের নির্বাহী নির্দেশ।
তবে লক্ষ করলাম যে, এই কথা বলার পরে বেশ কয়েক দিন হয়ে গেলেও এখনো ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো না। কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না। আমার মনে হয়, আর দেরি না করে এখনই নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে এ কথাও বলতে চাই, এ ধরনের নির্বাচনের আগে একটি নির্বাচনী পরিবেশও সৃষ্টি করতে হয়। সেই পরিবেশ খুবই সাদা কথায় বলা হচ্ছে যে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীরা যাতে অবাধে তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেটি করতে হবে।
আরো সহজ করে বললে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাকার ও স্বৈরাচার সমর্থিত সংগঠন বাদ দিয়ে অন্য যত ছাত্রসংগঠন আছে, তাদের অবাধ কর্মকাণ্ড নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। সে জন্য আমার মনে হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে পরিবেশ পরিষদ ছিল। সব ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে পরিবেশ পরিষদ সবগুলোকে আলোচনায় বসতে হবে। আলাপ-আলোচনা করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া দরকার। আমি আশা করব, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সেই কাজ করবে।
ডাকসুর পথ ধরেই সারা দেশে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করি। ছাত্রসমাজ তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মধ্যে থাকবে। নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ নেবে, এতে এই নেতৃত্ব ভবিষ্যতে জাতিকেও পথ দেখানোর কাজটি করতে পারবে।
লেখক : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিপিবি।