বিশ্ববিদ্যালয় দিবস
অনুভব জাগরণের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস
আজ ১২ জানুয়ারি ২০১৭, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দিনটি ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করছে। ১২ জানুয়ারি সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করবেন। ২০০১ সালে উপাচার্য বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবদুল বায়েস ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ পালনের প্রচলন শুরু করেন। এখন দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। বলা যায়, অধ্যাপক আবদুল বায়েস এ দিবস পালনের পথিকৃৎ। স্মরণযোগ্য যে, ১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি খ্যাতিমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম চৌধুরী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তি উৎসব পালন করেছিলেন।
১৯২১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, কৃষি, প্রকৌশল ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলেও পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার কাছাকাছি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার সালনায়। কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭ সালে ঢাকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে সাভার এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন স্থান নির্বাচন করা হয়। সাভারের ওপর দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে। এই মহাসড়কের পশ্চিম পাশে নির্ধারণ করা হয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্থান। এর পাশে রয়েছে ডেইরি ফার্ম, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাভার সেনানিবাস ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পপ্রধান হিসেবে ড. সুরত আলী খানকে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক ড. মফিজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’-এর উদ্বোধন করেন। তবে এর আগেই ৪ জানুয়ারি অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগে ক্লাস শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস করা হয়। এই অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’।
প্রতিষ্ঠার এই ৪৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় গৌরবোজ্জ্বল অনেক কীর্তি সাধিত হয়েছে। ইতোপূর্বেকার নিবন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ক্ষেত্রে কীর্তিমানদের বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল পদে কর্মরত।
আমরা জানি, সমাজ সংসারের প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ শেষে শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যান বটে; তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষালয়ের সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন হয় না। সময়-সুযোগ পেলে নাড়ির টানে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন তাঁর প্রিয় ক্যাম্পাসে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, নির্মাতা—সবাই মাঝেমধ্যে ছুটে আসেন ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য, জলাধার, পরিযায়ী পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং, সবুজ বৃক্ষ, পত্র-পল্লব, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার ভাস্কর্য, লাল সিরামিকের অট্টালিকা আর সবুজ মাঠে সবাই তার উপস্থিতি অনুভব করেন। অনুভব জাগরণের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও অ্যালামনাই ডে মিলনমেলায় বিশ্ববিদ্যালয় মুখরিত হবে এবং নান্দনিকতায় রং লাগবে নতুন ও প্রাক্তনের গায়ে—সে প্রত্যাশা সবার।
লেখক : প্রাক্তন ছাত্র, ২২তম ব্যাচ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ।