মিথ্যাবাদী মেয়র
একটা শহরের জন্য মেয়র কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা সবাই জানি। তাই সবাই চায় নিজের শহরে একজন ভালো মানুষ মেয়র হোক। মিথ্যাবাদী এক মেয়র কীভাবে একটা শহরকে শিশু শূন্য করে দিয়েছিল, তার এক গল্প আমাদের সবারই জানা।
গল্পটা ৭০০ বছর আগে জার্মানির এক ছোট্ট শহর হ্যামিলনের। সেই শহরে ইঁদুরের খুব উৎপাত শুরু হয়েছিল। শহরের বাসিন্দারা ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে মেয়রের কাছে গেলেন। গণ্যমান্য সব ব্যক্তিকে নিয়ে সভা বসল পৌরসভায়। মেয়র ও তার সঙ্গীরা কিছুতেই কোন বুদ্ধি খুঁজে বের করতে পারল না।
পরে এক বাঁশিওয়ালা এসে জানালো সে শহর থেকে সব ইঁদুর দূরে পাঠিয়ে দিতে পারবে কিন্তু তাকে এ জন্য পয়সা দিতে হবে। আর কোন উপায় না থাকায় মেয়র রাজি হয়ে গেল। বাঁশিওয়ালা এমন সুর ধরল যে সব ইঁদুর বের হয়ে এসে বাঁশিওয়ালার পেছনে ছোটা শুরু করল। তারপর সমুদ্রের কাছে গিয়ে বাঁশিতে এলো নতুন সুর আর সব ইঁদুর ঝাপিয়ে পড়ল সমুদ্রে। অবসান হলো নগরবাসীর ভোগান্তির।
কিন্তু বাঁশিওয়ালা যখন তার প্রাপ্য চাইতে গেল তখন মেয়র তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখল না। প্রাপ্য পয়সা তো দিলই না উল্টো অপমান করে তাড়িয়ে দিল বাঁশিওয়ালাকে। মেয়রের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে বাঁশিওয়ালা নতুন এক সুর তুলল বাঁশিতে আর সেই সুরে শহরের সব শিশু ছুটতে লাগল বাঁশিওয়ালার পেছনে। সারি বেঁধে তারা হারিয়ে যায় বিশাল পাহাড়ের ওপারে। সবাই ভেবেছিল শিশুরা বুঝি ফিরে আসবে, কিন্তু শিশুরা আর ফিরে আসেনি। শহরের সব সুখ নিয়ে বাঁশিওয়ালা সেই যে উধাও হলো আর ফিরে আসেনি কখনো। শিশুরাও ফেরেনি কোনোদিন।
এই গল্প নিয়ে অনেক ধরনের জনশ্রুতি রয়েছে। তবে গল্পটি যে নিছক গল্প নয় সেটা নিশ্চিত। অবিকল এই ঘটনা না ঘটলেও একটা কিছু ঘটেছিল হ্যামিলনে। হ্যামিলনের গির্জার দেয়ালে আঁকা এক ছবি থেকে প্রথম ব্যাপারটি জানতে পারে মানুষ। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার যে গল্পটি আমরা জানি সেটি লিখেছিলেন গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় ইয়াকপ গ্রিম ও ভিলহেল্ম গ্রিম। জার্মানির লোককথা সংগ্রাহক ছিলেন এই দুই ভাই।
কিন্তু এর পেছনে আসল ঘটনা কী ছিল? এ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য কেউ দিতে পারেনি। তবে অনেকে বলে, সেই সময়ে জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে (বর্তমান স্লোভাকিয়া এবং চেক রিপাবলিক) উপনিবেশ গড়ে তুলতে হ্যামিলনের অল্প বয়সী বেশ কিছু অধিবাসী একসাথে হ্যামিলন ছেড়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গির্জার ছবিটি আঁকা হয়েছিল।
আবার ওই এলাকার ইতিহাস বিশ্লেষণ করে অনেকে বলেন, কোনো এক অজানা রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল হ্যামিলনে। আর তাতে মারা গিয়েছিল শিশুরা। সেই স্মৃতি ধরে রাখা হয়েছে ছবিটির মাধ্যমে। আর বাঁশিওয়ালাকে রোগের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে গল্প ও ছবিতে।
কিন্তু এখনো হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প ওই শহরের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে। ওই গল্পের কারণেই বিশ্বের সবাই হ্যামিলনের নাম জানে। এখনো মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতি রোববার হ্যামিলনে বাঁশিওয়ালার গল্পটি পথনাটকের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। সেখানে ৮০ জন প্রাপ্তবয়স্ক হ্যামিলনবাসী ও শিশু বিশেষ পোশাক পরে ৩০ মিনিট ধরে বাঁশিওয়ালার গল্পের নানা কিছু সুন্দরভাবে তুলে ধরে৷ গড়ে দুই হাজার পর্যটক যা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখে৷